রাজীব চৌধুরী, মুর্শিদাবাদ: একসময় ছিল রাজবাড়ি। সম্পদে-বৈভবে উপচে পড়ত চারিদিক। দুর্গাপুজোয় রোশনাইয়ে চোখ ধাঁধিয়ে যেত। এখন সেসব অতীত। ভগ্নদশা হয়ে গিয়েছিল মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জের রাজবাড়িতে। তারপর সেই ভেঙে পড়া রাজবাড়ির একটি অংশ সংস্কার করে তৈরি হয়েছে বিলাসবহুল রিসর্ট বা হেরিটেজ হোটেল। আর পুরনো রাজবাড়ির পুজোর স্বাদ ফিরিয়ে আনতে সেই হোটেল কর্তৃপক্ষ শুরু করেছে দুর্গাপুজো। হোটেলে থাকা আবাসিকরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন সেই পুজোতে। মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জে বড়ি কোঠি হেরিটেজ হোটেল কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ এইবার দ্বিতীয় বছরে পড়েছে।
হোটেলে দুর্গাপুজো:
সংস্কারের পরে বিলাসবহুল সেই হোটেলের স্থাপত্য নজর কাড়ার মতো। বড় বড় ঘর। রয়েছে যাবতীয় আধুনিক ব্যবস্থা। সেইরকম একটি হোটেলেই আয়োজন করা হয়েছে দুর্গাপুজোর। পুজোর কটাদিন যাঁরা এই হোটেলে কাটাতে চান তাঁরা সহজেই সাবেকি দুর্গাপুজোর স্বাদ নিতে পারবেন। পুজোর আনন্দে সামিল হওয়ার সুযোগ পাবেন।
পুরনো আমেজের খোঁজে:
আগে বড়ি কোঠি রাজবাড়িতে ঘটা করে দুর্গাপুজো হতো। এখন আর রাজবাড়ির সে দিন নেই। তাই পুজোয় আয়োজনে এগিয়ে এসেছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। এই নিয়ে দ্বিতীয়বছর পুজোর আয়োজন করা হয়েছে বড়ি কোঠিতে। আজিমগঞ্জ বড়ি কোঠির মুখ্য আধিকারিক অভিরূপ ঘোষ বলেন, 'আমরা সর্বধর্ম সমন্বয়ের চেষ্টা করেছি। এখানে হিন্দু, মুসলিম, দলিত, সকলেই অংশ নিয়েছেন উত্সবে।' অপারেশনাল হেড সৃজনী দত্ত বলেন, 'বাঙালির সবথেকে বড় উত্সবে সকলকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।'
প্রথা মেনে পুজো;
প্রথা মেনেই পুজো হয় বড়ি কোঠিতে। রবিবার, সপ্তমীর সকালে রাজবাড়ি থেকে ভাগীরথীতে গিয়ে ঘট ভরে আনা হয়। উপাচার মেনে হয় কলাবউ স্নান। পুজোর কদিন বড়ি কোঠি হেরিটেজ হোটেলের আবাসিকদের জন্য বিভিন্ন গেমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুজোর কটাদিনএকেবারে খাঁটি বাঙালি রান্না মিলবে হেরিটেজ হোটেলে।
মুর্শিদাবাদ বাংলার অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনস্থল। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লার স্মৃতি বিজড়িত এই জায়গা। শুধু তাই নয়, পলাশির যুদ্ধ। নবাব আলিবর্দি খাঁয়ের বংশ থেকে শুরু করে মীরজাফর, মীরকাশিম, জগৎশেঠ, উঁমিচাঁদের মতো ইতিহাসের একাধিক চরিত্র যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে এখানে। রয়েছে একাধিক ঐতিহাসিক পর্যটনস্থল। ফলে পর্যটকদের আকর্ষণের একটা জায়গা আগে থেকেই রয়েছে। তার উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে এই হেরিটেজ হোটেল। তার সঙ্গে এবার দুর্গাপুজোও পর্যটকদের কাছে আরও একটি আকর্ষণ হিসেবে হাজির করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কলকাতার বুকে শতাব্দী প্রাচীন পুজো, পরতে পরতে জড়িয়ে ইতিহাস