কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: কলকাতার দুর্গাপুজোর একটি দিক যেমন বারোয়ারি তেমনই আর একটি দিক বনেদি বাড়ির পুজো। পরতে পরতে ইতিহাস নিয়ে কলকাতায় আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে বহু প্রাচীন দুর্গাপুজো। সেরকমই একটি হল কলকাতার বেচু চ্যাটার্জি স্ট্রিটের সুবল চাঁদ চন্দ্রের ঠাকুরবাড়ির পুজো।
প্রতিমা থেকে পুজোর রীতি, কলকাতার এই বনেদি বাড়ির পুজো ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস। এখানে দেবী বসে রয়েছেন শিবের কোলে। নেই মহিষাসুর, দেখা নেই সিংহেরও। দেবী এখানে শান্তিদায়িনী রূপে বিরাজমান। এই বছর এই পুজো ২৬১ বছরে পড়ল। অর্থাৎ কলকাতার বুকে আড়াইশো বছরের বেশি পুরনো এক দুর্গাপুজো। কলেজ স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির উল্টোদিকে রয়েছে বেচু চ্যাটার্জি স্ট্রিট। সেখানেই সুবল চাঁদ চন্দ্রের ঠাকুরবাড়ি। ওই ঠাকুর দালানে রয়েছে দেবীর ওই অভয়া মূর্তি। কলকাতার এই পুরনো পুজোর পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে স্বতন্ত্র পুজোর পদ্ধতি, প্রথা।
কে ছিলেন সুবল চাঁদ চন্দ্র?
সুবল চাঁদ চন্দ্র ছিলেন সেকালের এক বাঙালি শিল্পোদ্যোগী। ইংল্যান্ডের বার্নিংহাম ও ম্যাঞ্চেস্টারে ছিল তাঁর কাপড়ের কল। পদাবলী কীর্তনের প্রসারে, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। সেই সুবল চাঁদ চন্দ্রের হাত ধরেই কলেজ স্ট্রিটের ঝামাপুকুরের এই পুজোর বৈভব। যে পুজোতে আসতেন স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। চন্দ্র পরিবারের বর্তমান সদস্য শুভেন্দু চন্দ্র বলেন, 'রামপ্রসাদ চন্দ্র জোড়াসাঁকোয় পুজো শুরু করেছিলেন। ১৮৬০ সালে জোড়াসাঁকো থেকে সুবল চাঁদ চন্দ্র ঠাকুরকে নিয়ে আসেন।' চন্দ্র পরিবারের আর এক বর্তমান সদস্য বলেন, 'বিদ্যাসাগর মাকে নিয়ে এখানে পুজো করেছিলেন। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র এই মণ্ডপে এসে চণ্ডীপাঠ করেছেন।'
অন্যরকম রীতি-নীতি
প্রতিমার অবয়ব থেকে পুজোর রীতি-নীতি। সব কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। এখানে দেখা যায় দেবী বসে রয়েছে শিবের কোলে। দেবীর পায়ের তলায় মহিষাসুর নেই। নেই সিংহ। দেবী এখানে শান্তিদায়িনী। ভোগের রান্নায় নুন ব্যবহার করা হয় না। দেবীর ভোগে কোনও রসের মিষ্টি দেওয়া হয় না। এমনকী, পুজো চলাকালীন পরিবারের সদস্যদের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট পোশাকবিধিও।
চন্দ্র পরিবারের সদস্য নয়নিকা চন্দ্র বলেন, 'এখানে ফিক্সড মেনু থাকে। ডাব দিতে হয় ভোগে। অন্ন ভোগ নয়। নুন ছাড়া সব ভাজা হয়।' চন্দ্র পরিবারের আরও এক সদস্য সুজাতা চন্দ্র বলেন, 'এখানে নির্দিষ্ট পোশাকবিধি রয়েছে। নাকে নথ, পায়ে মল পরতে হয় মহিলাদের। ছেলেদের চেলি-গেঞ্জি আর চাদর পরতে হয়।' বৈষ্ণব এবং শাক্ত এই দুই ধারার মিশেলে বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে এই পুজো।
আরও পড়ুন: অভিনব মণ্ডপসজ্জা থেকে থিমের বাহার, কলকাতার একাধিক পুজো পেল এবিপি আনন্দের বিশেষ সম্মান