কলকাতা : উত্তর কলকাতার লাহা বাড়ি। এ বাড়ির প্রতিটি ইঁটে যেন ইতিহাস কথা বলে। লাহা পরিবার সুবিস্তৃত। লাহা পরিবারের তিন তরফে সুবিশাল তিন বাড়ি। পালা বদল করে মা দুগ্গা পূজিত হন তিন তরফেই। এ পুজোর ইতিহাস বহু প্রাচীন। কলকাতায় লাহারা আসার আগে এঁরা ছিলেন আদিবাড়ি চুঁচুড়ায়। তারপর কলকাতায় এসে পরিবারের প্রতিপত্তি যত বেড়েছে , মা দুগ্গার পুজোর জৌলুসও বেড়েছে তত। এ বাড়ির পুত্রবধূ অপর্ণা লাহা ভাগ করে নিলেন পুজোর এমনই কিছু গল্প। 


এ বাড়িতে মাসের পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে নানা বিধি। যার শুরুটা জন্মাষ্টমীর পর নন্দোৎসব থেকেই। সেদিন এই পরিবারে কাঠামো পুজো হয়। সেই সঙ্গে হয় গণেশ বন্দনা ।  সেই গণেশই দুর্গার সঙ্গে থাকা গণেশের মূর্তির ভিতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তৈরির সময়। 


এই বাড়ির প্রতিমা ত্রিশূল হাতে অসুরসংহারী নন। বরং চার ছেলেমেয়েকে সঙ্গে মা এক চালচিত্রে পূজিত হন হরগৌরি রূপে। শিব ঠাকুরের কোলের উপর বসেন গৌরি। এই পরিবারের ঈষ্ট দেবী জয় জয় মা অর্থাৎ জগজ্জননী।


এ পরিবারের তিন তরফ। প্রাণকৃষ্ণ, নবকৃষ্ণ ও শ্রীকৃষ্ণ লাহা। এই বছর মা পূজিতা হবেন বড় তরফে, মুরারি লাহার বাড়িতে। লাহা পরিবারের এই বাড়িতেই আছে পাস্তুর ল্যাবরেটরি রয়েছে। ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির বিপরীতে। 


 মহালয়ার পরদিন অর্থাত্ প্রতিপদ থেকে ভিয়েন বসে। তারপর থেকে একের পর এক মিষ্টি তৈরি হয়। যেমন - মালপোয়া, হালুয়া, তিলের নাড়ু, মুগের নাড়ু, ছোলার নাড়ু, মোয়া, দরবেশ, গজা, লবঙ্গলতিকা, প্যাঁড়াক্ষীর ইত্যাদি। সেই ট্র্যাডিশন আজও অব্যাহত। তাই এখন চলছে জোর কদমে প্রস্তুতি। ক্ষীর দই রাবড়ি ইত্যাদি নানা মিষ্টান্নে সেজে ওঠে মা দুর্গাকে নিবেদন করা ভোগ। চাল দিয়ে সাজানো হয় নৈবেদ্য। প্রতিপদ থেকেই ঠাকুর ঘরে পৌঁছায় নৈবেদ্য। 

আরও পড়ুন :


কাচের মধ্যে আলোর খেলা, চোরবাগান সর্বজনীনের এবার থিম অন্তর্শক্তি


ষষ্ঠীর দিন হয় অধিবাস ও বোধন। সপ্তমীর সকালে কলা বৌ স্নানের পর নবপত্রিকা অধিষ্ঠিত হয়। সপ্তমীর সকালেই স্বামী সোহাগিনী মা দুর্গার সামনে এনে রাখা হয় কূলদেবী জয় জয় মা কে। অষ্টমীতে পূজিতা হন কুমারী। তাঁর আগেই কনকাঞ্জলি নেন বাড়ির গৃহিনী।  ফের দশমীর সকালে বিসর্জনের কার্যাদির পর জয় জয় মা কে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ঠাকুর ঘরে। দশমীর সকালের পুষ্পাঞ্জলি কিন্তু দেন পুরুষরাই, মহিলারা নয় !  সন্ধেয় হয় বিসর্জন।  এই বাড়িতে পুজোর ৪ দিন নিরামিষ খাওয়ার রীতি।  প্রতিমা বরণের পর দশমীর দুপুরে মাছ-ভাত খাওয়ার চল আছে। 


এ পুজোয় চারটি ফল বলি হয়। ধুনো পোড়ানো এই বাড়ির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এই বাড়ির বিসর্জনের রীতি বেশ অভিনব। মায়ের মূর্তি দড়িতে বেঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিমা বেরিয়ে গেলেই দোর দিয়ে দেওয়া হয়। যতক্ষণ না বিসর্জন করে বাড়ির কর্তা ফিরছেন, ততক্ষণ দরজা  খোলা হয় না। বিসর্জন করে ফিরে এসে গৃহকর্তা জিগ্যেস করেন, মা আছেন ঘরে? ভিতর থেকে বাড়ির গৃহিণী তিনবার এই কথা বলার পর দোর খোলা হয়।