সঞ্চয়ন মিত্র, কলকাতা : বিশ্বের দরবারে মহিষাসুরমর্দিনীকে তুলে ধরতে উদ্যোগ। মহিষাসুরমর্দিনীর আলেখ্য অংশ ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন বাচিক শিল্পী সুপ্রিয় সেনগুপ্ত। আগামীদিনে গানগুলিও ইংরেজি অনুবাদ করার পরিকল্পনা আছে শিল্পীর।
মহালয়া...পুজো শুরু
আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠল আলোর বেণু। শিশির ভেজা শরতের ভোরে আকাশবাণীতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী৷ আধো-ঘুম, আধো-জেগে থাকা সকালে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর কণ্ঠে স্তোত্র শুনে বড় হয়েছে বাঙালির একের পর এক প্রজন্ম। মাতৃ-আবাহনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছেন মহিষাসুরমর্দিনী৷
বিশ্বব্যাপী করার ভাবনা
বিশ্বায়নের যুগে, বিশ্বের দরবারে মহিষাসুরমর্দিনীকে তুলে ধরতে এবং আগামী প্রজন্মের কাছে একে আকর্ষণীয় করে তুলতে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন বাচিক শিল্পী সুপ্রিয় সেনগুপ্ত। ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র সংস্কৃত স্তোত্র ও গানের অংশগুলি একই রেখে, আলেখ্যর অংশগুলি ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে। আগামীদিনে মহিষাসুরমর্দিনীর, গানগুলিও ইংরেজি অনুবাদ করার পরিকল্পনা আছে শিল্পীর।
মহালয়া
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ অনুযায়ী ‘মহালয়’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত উৎস মহৎ এবং আলয়। কিংবা মহত্ত্বের আলয়ও বলা যেতে পারে। এই মহালয় শব্দ থেকেই স্ত্রীবাচক পদ এসেছে- মহালয়া। ব্যাকরণ অনুযায়ী, তিথি শব্দটি যেহেতু স্ত্রীলিঙ্গ, তাই এর বিশেষণ পদটি হল মহালয়া। তবে এই মহালয়ার শব্দের নানাবিধ অর্থ রয়েছে। যেমন, মহালয় প্রসঙ্গে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বলা হয়েছে, যে ক্ষণে পরমাত্মায় অর্থাৎ পরব্রহ্মে লয় প্রাপ্তি ঘটে সেটিই হল মহালয়। কেননা, পরমাত্মাই হল পরব্রহ্ম। আর নিরাকার ব্রহ্মের আশ্রয়ই হল মহালয়।
তবে শ্রী শ্রী চণ্ডিতে মহালয় হচ্ছে পুজো বা উৎসবের আলয়। এখানে আলয় শব্দটির একটি অর্থ হচ্ছে আশ্রয়। চণ্ডিতে তাই 'মহালয়' বলতে 'পিতৃলোককে ' বোঝানো হয়েছে। পিতৃলোককে স্মরণের ক্ষণকেই বলা হয়েছে মহালয়া। এই সন্ধিক্ষণটিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পথ ধরে ব্যাখ্যাও করা হয়েছে। বলা হয়, মহালয়া হয় অমাবস্যা তিথিতে যা উত্তরায়ণের শেষ সময়। এরপরই সূর্যের দক্ষিণায়ণ গতি শুরু হয়। যা শুভ বলে বিবেচিত নয়। কৃষ্ণপক্ষে কালিমার ক্রমশ লয় হতে হতে অমাবস্যা তিথিতে সে লয় পূর্ণতা পায়। তাই একে বলে মহালয়া।
মহালয়ায় তর্পণ এক মহালগ্ন মহালয়া। পিতৃপক্ষের অবসানে জগজ্জননী মা দুর্গার (Durgapuja 2022) আগমনবার্তা জানিয়ে যাওয়া আলোকময় এক দিন। বিশ্বাস, এ দিন পূর্বপুরুষদের আত্মাদের স্ব-স্বলোকে ফিরে যাওয়ার দিনও। দেবীপক্ষের সূচনাও এদিন। তাই এই পুণ্যদিনে সন্তানাদির হাতে জল পেয়ে তাঁরা তৃপ্ত হলে, তার থেকে শুভ আর কিছু নেই।
আরও পড়ুন- শ্রদ্ধাবনত তর্পণে পূর্বপুরুষ-আত্মার তৃপ্তি, কী লাভ ? কীভাবে জল-অন্নদান