কলকাতা: বনেদি বাড়ি থেকে বারোয়ারি- প্রতিবছর আশ্বিনেই দুর্গা (Durga Puja) আরাধনায় সবাই মেতে ওঠেন। নিজের নিজের মতো করে সবাই আয়োজন করেন পুজোর। এখন সমাজ বদলেছে। বদলেছে পরিবারের গঠন, বদলে গিয়েছে পাড়ার ধারণাও। চারিদিকে মাথা তুলেছে বহুতল আবাসন। এখন পুজোর আমেজ লাগে সেখানেও। সবাই মিলে হইহই করে আয়োজন করেন দুর্গা আরাধনার। বারোয়ারি পুজোর মতো আবাসনের পুজোতেও এখন লেগেছে থিমের বাহারের চমক। আর সেখানেই নিজের ছাপ রেখেছে রাজারহাটের সিলভার ওক এস্টেট।


রাজারহাটের (Rajarhat) কালী পার্কের সিলভার ওক এস্টেট। আবাসনে রয়েছে ৫০০ ফ্ল্যাট, ৫০টি বাংলো। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন ২২০০-এরও বেশি বাসিন্দা রয়েছেন এই আবাসনে। এবার আট বছরে পড়ল এদের পুজো। মন্ডপ সজ্জা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-খাওয়া দাওয়া। রকমারি আয়োজন রাখছেন উদ্যোক্তারা। প্রতিদিনের কাজের ব্য়স্ততা সামলে বাসিন্দারা কীভাবে আয়োজন করেন এই পুজো? এবিপি লাইভকে জানালেন পুজো কমিটির প্রেসিডেন্ট অমিত মুখোপাধ্যায়।


সিলভার ওক এস্টেটে গত বছর থেকে শুরু হয়েছে থিম পুজো (Theme Puja)। এই বছর এখানকার থিমে রয়েছেন ফেরিওয়ালারা। আরও ভাল করে বললে সেকাল-একালে জিনিস ফেরির বদলে যাওয়া চেহারা থিমে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে এখানে। এবারের থিমের নাম দেওয়া হয়েছে, 'ঝাঁকা মাথায় জীবন করি ফেরি...ঝাঁকায় এবার মা কে শরণ করি।' বেত-বাঁশের তৈরি ঝাঁকা তৈরি হচ্ছে এখানেই। তা দিয়েই সাজছে মন্ডপ। সেকালের ঝাঁকায় ভরে মুটের পণ্য আনা থেকে একালে বাইকে করে অনলাইন ডেলিভারি। এমন নানা ছবি ফুটিয়ে তুলছেন শিল্পীরা, ভাবনায় সুরজিৎ সেনগুপ্ত। প্রদীপ রুদ্র পালের প্রতিমায় হবে পুজো।
 
কীভাবে চলছে এই কাজ? পুজো কমিটির প্রেসিডেন্ট অমিত মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, প্রায় সব বাসিন্দাই পুজোর প্রস্তুতিতে সাহায্য করেন। জনা তিরিশ আবাসিকের একটি কমিটি রয়েছে, সেটিই সব দেখাশোনা করছে। রয়েছে একাধিক সাব কমিটিও। কেউ দেখছেন মন্ডপ তৈরি ও প্রতিমা তৈরির বিষয়টি। সেই টিমের নাম সৃজন। কেউ রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে। এরকমই নানা ভাবে ভাগ করে চলছে কাজ। এই আবাসনের স্পেশালিটি হল আলপনা। সেই আলপনার জন্য স্পেশাল টিম রয়েছে। অমিতবাবু জানাচ্ছেন, আলপনার জন্য পুরস্কারও পেয়েছেন তাঁরা।


দুর্গাপুজো হবে আর খাওয়া-দাওয়া হবে না। এমনটা তো হয় না। এই আবাসনেও থাকছে ভোজের বিপুল আয়োজন। কেউ আমিশাষী, কেউ আবার নিরামিশাষী। তাই পুজোর কটাদিন ২ রকম ব্যবস্থাই থাকছে। আর আলাদা করে থাকছে ভোগের ব্যবস্থা। পুজোর ভোগের কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় তার জন্য রয়েছে ৪০ জনের টিম। তাতে রয়েছে আবাসনেরই বাসিন্দা ৪০ জন বয়স্কা। বারোয়ারি পুজোর ফাংশানের স্বাদ থাকছে এখানেও। পুজোর দিনগুলি নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাতাবেন আবাসিকরাই। আবাসনে রয়েছে একটি ইন-হাউস ব্যান্ডও। আর পুজোর অনুষ্ঠানের মধ্য়েই একদিন এখানে গানের অনুষ্ঠান রয়েছে স্বনামধন্য এক গায়িকার। পুজোয় সাবধানতা বজায় রাখতে প্রাথমিক চিকিৎসা ও নিরাপত্তার দিকেও নজর থাকছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।  


রীতি মেনে পুজো থেকে খাওয়া-দাওয়া, ভোগ থেকে মনজুড়ানো ফাংশান। সবকিছুর ডালি নিয়ে তৈরি এই আবাসন। এখন শুধুই দিনগোনার পালা।


আরও পড়ুন: অগ্নিযুগের স্মৃতি বুকে নিয়ে ধ্বংসস্তূপ রাজবাড়ি! এখনও নিষ্ঠাভরে হয় দুর্গাপুজো