প্রদ্য়োৎ সরকার, কৃষ্ণনগর: প্রতিপদে হোমকুণ্ড জ্বালিয়ে সূচনা হল কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী রাজরাজেশ্বরীর পুজোর (Krishnanagar Rajbari Raj Rajeshwari Puja)। প্রতিবছরই মহালয়ার পরের দিন প্রতিপদ থেকে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী রাজরাজেশ্বরী পুজোর সূচনা হয় হোমকুণ্ড জ্বালানোর মধ্যে দিয়ে। এই হোমকুণ্ড বা যজ্ঞের আগুন জ্বলে মহানবমী পর্যন্ত। জেলা, রাজ্য তথা দেশবাসীর কল্যাণে এই হোমকুণ্ড জ্বালানো হয় রাজবাড়ির পক্ষ থেকে। 


কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির বর্তমান সদস্য সৌমেশ রায় এবং তাঁর সহধর্মিনী অমৃতা রায় হোমকুণ্ড পুজো করে এই বছরের পুজোর (Durga Puja 2024) সূচনা করলেন। রাজ পরিবারের দাবি, এই পুজো প্রায় ৬০০ বছর ধরে হয়ে আসছে। পরবর্তীতে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই পুজোকে সার্বজনীন রূপ দেন। রাজ পরিবারের নানা রীতি মেনে এই পুজো হয়ে আসছে।


কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির রাজরাজেশ্বরী মায়ে সামনের দুটি হাতই বড়। আর পিছনের ৮টি হাত অপেক্ষাকৃত ছোট। দেবীর গায়ে থাকে বর্ম। সজ্জিত তিনি যুদ্ধের বেশে। রাজরাজেশ্বরী মাতার পিছনে অর্ধ গোলাকৃতি পুরনো চালচিত্রে একদিকে আঁকা থাকে দশাবতার আর অন্যদিকে দশমহাবিদ্যা। মাঝে থাকেন পঞ্চানন অর্থাৎ পঞ্চমুখী শিব। সিংহের পিঠে সওয়ার রাজরাজেশ্বরী মায়ের সামনে থাকে ঝুলন্ত অভ্রধারা। এখানকার প্রতিমার সাজেও থাকে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য। প্রচলিত ডাকের সাজের থেকে যা আলাদা। রাজবাড়ি সূত্রে জানা গেছে, একে বলা হয় বেদেনি ডাক।


প্রাচীনকালের মতো এখন কামান দেগে না হলেও আজও এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল সন্ধিপুজো। অতীতের মতো আজও রাজবাড়ির সন্ধিপুজো দেখতে ভিড় করেন আশেপাশের অসংখ্য মানুষ। প্রথা মেনে মা-কে ১০৮টি পদ্মফুল নিবেদন করা হয়। জ্বালানো হন ১০৮টি প্রদীপ। অতীতে দুর্গাপুজোতে পাঠা বলি হত। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেই প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে। এখন আখ এবং চালকুমড়ো বলি দেওয়া মায়ের সামনে। আর মা রাজরাজেশ্বরীকে ভোগ নিবেদন করা হয় মহালয়ার পর থেকেই।


কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির বর্তমান রাজমাতা অমৃতা রায় ২০০২ সালে দশমীর দিন সিঁদুর খেলা শুরু করেন। সেই উপলক্ষে দশমীর দিন সকাল থেকেই আজও কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে ভিড় করেন অসংখ্য মহিলা। রীতি মেনে দেবী রাজরাজেশ্বরী-কে বরণের পরেই জগতের সকলের মঙ্গল কামনায় শুরু হয় সিঁদুর খেলা। চারিদিকে আজ নানারকম থিমের পুজো চালু হয়েছে। তা সত্ত্বেও আজও দুর্গা পুজোর পাঁচদিন কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির রাজরাজেশ্বরী পুজো দেখতে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ। রাজবাড়ির সদস্যদের সঙ্গে তাঁরা মেতে ওঠেন আদ্যাশক্তির আরাধনা।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।