উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : এ বাড়িতে এ সময় থাকত শিউলির গন্ধ। আত্মীয় - পরিজনদের হাসির আওয়াজ। মায়ের আগমনী গান। আর এ বছর শুধুই কান্না .... আর্ত চিৎকার ... হাহাকার...বিসর্জনের বিষন্নতা । এক বছর পর মা আসছেন কিন্তু, এই বাড়ির দুর্গার বিসর্জন হয়ে গেছে ৮ অগাস্ট।
মেয়ের ইচ্ছাতেই বাড়িতে শুরু হয়েছিল দুর্গা আরাধনা। কিন্তু, আজ দেবীপক্ষের শুরু হয়ে গেলেও, চোখের জল বাঁধ মানছে না আর জি করের নিহত চিকিৎসকের মা-বাবার। 'আমার সব শেষ হয়ে গেছে, কিছু আর নেই আমাদের লাইফে, যত কিছু করেছিলাম সব গঙ্গায় ভেসে গেছে আমার, দুর্গা আসার আগেই বিসর্জন হয়ে গেছে।'
নির্যাতিতা চিকিৎসকের মা জানালেন, ২ বছর আগে বাড়ির গ্যারাজে পুজো শুরু করেছিলে চিকিৎসক কন্যা। আগা বাড়ির দুর্গা মূর্তিতে অষ্টমীতে ভোগ দিতেন মা। মেয়ে এমডি পাওয়ার পর ইচ্ছেপ্রকাশ করে ঘরোয়াভাবে দুর্গাপুজো করবে। বন্ধু আত্মীয় সবাই মিলে চারটে দিন। ২টো বছর পুজো করতে পেরেছিলেন। এবছরও পুজোর প্রস্তুতি ছিল পুরো পরিপাটি করে। কেনা ছিল মা দুর্গার শাড়ি। ঢাকির বুকিংটাও করা ছিল। আয়োজন সম্পূর্ণ থাকলেও এ বছর পুজোটা আর হল না। বোধনের মাস দুই আগেই সেই বাড়ির উমা চিরবিদায় নিলেন।
নিহত চিকিৎসকের মা ডুকরে উঠে জানালেন, প্রতি বছর মহালয়ার দিন প্রদীপ জ্বালাতেন । তারপর ৯ দিন ধরে নিরামিষ ভোজন। একেবারে দশমীতে গিয়ে নিয়মভঙ্গ। আত্মীয়দের হইহল্লায় ঘর সরগরম থাকত। এবার শুধু নীরবতা, নিঃসঙ্গতা।
এবারের পুজোরও প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, হঠাৎ সব তছনচ হয়ে গেল। নিহত চিকিৎসকের বাবা জানালেন, এবারেও পুজোর প্রস্তুতি হয়ে গিয়েছিল। ঢাকির বায়না হয়ে গিয়েছিল। এমনকী অগ্রিমও পৌঁছে গিয়েছিল। এখন তিনিও ফোন করে আকুল নয়নে কেঁদে চলেছেন।
মা জানালেন, ছোটবেলা থেকেই দুর্গাভক্ত মেয়ে। শিবের মাথায় জল দিয়ে পুজো করতেন তিনি। ডাক্তারিতে চান্স পেয়ে ঠিক করেন দুর্গাপুজো করবেন। ' আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। আমি বললাম অনেক কষ্ট, অনেক খরচ, অনেক লোক লাগে। সব পারব মা। তুমি শুধু ভোগ করবে, আমি ঠাকুরঘরে। সেটাই করত। এতো সুন্দর আলপনা দিত, সবাই তাকিয়ে থাকত। '
দুর্গাপুজোয় বাড়ির গ্যারেজে প্রতিমা রাখা হত। রাস্তায় হত প্যান্ডেল। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবে পুজোর পাঁচটা দিন বাড়ি একেবারে গমগম করত। এবারও ঠিক সেটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা আর হবে না। বাড়িতে এখন শোকের ছায়া।
আরও পড়ুন :