সন্দীপ সমাদ্দার, পুরুলিয়া: পুজোর মুখে নিম্নচাপের জেরে বিপর্যস্ত কলকাতা থেকে জেলা। গতকাল, অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল থেকে দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে কলকাতা জুড়ে। তবে প্রত্যেকবারের বৃষ্টির তেজ এতটাই যে, কলকাতার অধিকাংশ রাস্তায় জলমগ্ন। যে সমস্ত রাস্তায় সাধারণত জল দাঁড়ায় না, সেই সমস্ত রাস্তাও এদিন জলমগ্ন হয়ে গিয়েছিল। তবে মানুষের উৎসাহের কমতি নেি। সন্ধেবেলা বৃষ্টি থামতেই অনেকেই জল ভেঙেই বেরিয়ে পড়েছেন ঠাকুর দেখতে। তবে জেলা থেকে শুরু করে শহর, বিভিন্ন জায়গায় পুজোর রীতিনীতি একেবারেই আলাদা। উৎসব বা জাঁকজমক নয়, রীতিনীতিই এখানকার পুজোর মূল উপজীব্য। জেনে নেওয়া যাক, অবাক করা এমন এক পুজোর কথা, যেখানে দেবী প্রতিমা থাকেন ব্যাঙ্কের লকারে!
এই পুজো পুরুলিয়ার। সাধারণত মা দুর্গার মূর্তি তৈরি হয় কুমোরটুলিতে। মাটির মূর্তি। তবে এখানে, মা দুর্গা থাকেন ব্যাঙ্কের লকারে। শুধুমাত্র পুজোর সময়েই মাতৃমূর্তিকে রাজবাড়িতে নিয়ে আসা হয় পুলিশি প্রহরায়। ৷ পুজোর চারদিন জেলা পুলিশের নিরাপত্তায় রাজবাড়িতে পুজো নেন মা দুর্গা। এই রীতি মেনেই দুর্গা পুজো হয়ে আসছে পুরুলিয়ার জয়পুরের রাজবাড়িতে। এখানের দুর্গা মায়ের মূর্তি সোনার তৈরি। জেলা ছাড়িয়ে ভিন জেলা এবং ভিন রাজ্য থেকে সোনার দুর্গা দেখতে প্রচুর দর্শনার্থীদের আগমন হয়।
জয়পুর রাজবাড়ির পুজোর ইতিহাস সম্পর্কে কথিত আছে, প্রায় চারশো বছর আগে রাজা জয়সিংহ পুরুলিয়ায় আসেন ৷ যাঁর নামে এই অঞ্চলের নাম জয়পুর ৷ এই এলাকার মুণ্ডা সর্দারকে হত্যা করে জঙ্গলমহলের এই এলাকা দখল করেন ৷ তারপর এই রাজবাড়িতে কলা বউয়ের পুজো শুরু করেন । বহু বছর কেটে যাওয়ার পর দুর্গাপুজোর দিন আগুন লেগে যায় কলা বউয়ে ৷ এরপরই রাজা কাশীনাথ সিংহ স্বপ্নাদেশ পান, সোনার প্রতিমা তৈরি করে পুজো করার। প্রায় দেড় কেজি সোনা দিয়ে দুর্গা মূর্তি তৈরি করেন এবং রুপো দিয়ে চালচিত্র তৈরি করান রাজা ৷ সেই থেকে সোনার মূর্তি পুজো হয়ে আসছে জয়পুর রাজবাড়িতে ৷ এরপর ১৯৭০ সালে ডাকাত হানা দেয় রাজবাড়িতে ৷ তারা সোনার মূর্তির হদিশ না পেয়ে মন্দিরে রাখা সমস্ত অলঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায় ৷ এই ঘটনার পর তৎকালীন জেলা পুলিশের উদ্যোগে পুজোর চার দিন ছাড়া ৩৬১ দিন সোনার দুর্গা মূর্তি ব্যাঙ্কের লকারে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই রীতিই আজও চলছে ।