গৌতম মণ্ডল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: দক্ষিণ ২৪ পরগনার (South 24 Parganas) অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর। ব্রিটিশ আমল থেকেই বন্দর শহর হিসেবে পরিচিত। জলদস্যু, ইংরেজ-পর্তুগিজ লড়াই, লবণ সত্যাগ্রহ থেকে শুরু করে ডায়মন্ড হারবারের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। অধুনা ডায়মন্ড হারবার শহরেরই লাগোয়া বারদ্রোণ গ্রাম। এই এলাকারই পুরনো বাসিন্দা মণ্ডল পরিবার। সেই পরিবারের পুজো ঘিরে এখনও সাজ সাজ রব পড়ে এখানে।                       


সময়টা ইংরেজ আমল। কথিত রয়েছে এই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন গোলকচন্দ্র মণ্ডল। সেই সময়ে তেল-সাবানের ব্যবসা করে ফুলে-ফেঁপে ওঠেন তিনি। লবণ ও ধানের ব্যবসাও ছিল তাঁর। সেই ব্যবসার টাকায় জমি কিনে জমিদারি পত্তন করেন তিনি। জমিদারি শুরুর পরেই বারদ্রোণ গ্রামে শুরু হয় দুর্গা পুজো। দাবি করা হয়, বাংলা ১৮৬৮ সনে সূচনা হয় এই পুজোর। পরে তৈরি করা হয়েছে বিশাল আকৃতির দুর্গাদালান। মণ্ডল পরিবারের বাড়ির প্রবেশপথে রয়েছে সিংহদুয়ার। কথিত রয়েছে, জমিদারি আমলে নাকি এই বাড়ির এই সিংহদুয়ারেই নাকি থাকত বন্দুকধারী দারোয়ান। এবার ১৫৮ বছরে পড়ল বারদ্রোণ গ্রামের মণ্ডল বাড়ির এই পুজো। পরিবারের বর্তমান প্রজন্মই এই পুজোর আয়োজন করে এখন।                               


কালের নিয়মে জমিদারি গিয়েছে, অর্থের সংস্থান কমেছে। জৌলুসও অনেকটাই হারিয়েছে এই পুজো। কিন্তু সেসব ঢাকা পড়ে যায় নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতায়। সবরকম নিয়ম মেনে, পঞ্জিকা মেনে দেবী পূজিতা হন এখানে। মণ্ডলবাড়ির পুজোয় দেবীপ্রতিমা একচালার। এই পুজোর একটি বিশেষত্ব রয়েছে, সপ্তমীর দিন হোমাগ্নি হয় এখানে, সেই অগ্নিশিখা টানা জ্বলতে থাকে দশমী পর্যন্ত। দেবী প্রতিমা বিসর্জনের পরে সেই হোমাগ্নি নেভানো হয়। এই পুজোয় আরও একটি নিয়ম রয়েছে। পরিবারের সব সদস্য কলাপাতায় দুর্গামাতা সহায় লিখে বিসর্জনের ঘটে রাখেন। তারপরে পুরোহিত শান্তিজল ছিটিয়ে পুজো শেষ করেন। মণ্ডলপরিবারের পুজোয় কুমারী পুজোও হয়। এখন এই পরিবারের অনেক সদস্যই বাইরে থাকেন। পুজো উপলক্ষে জড়ো হন সকলে। পুজোর কদিন একসঙ্গে পাতেপেড়ে চলে খাওয়া-‌দাওয়া, হইহুল্লোড়।


আরও পড়ুন: ঠাকুর দেখতে যাওয়ার আগেই জেনে নিন, এবিপি আনন্দ শারদ সম্মান পেল কোন কোন পুজো ?