বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুর: দেবীপক্ষের শুরু। পুজো আসতে আর হাতে গোনা কয়েকটা দিন বাকি হলেও, কলকাতার রাস্তায় ঘুরলে আপনার মনেই হবে না যে পুজো আসতে এখনও কয়েকটা দিন বাকি রয়েছে। তবে মহিষাদল রাজবাড়িতে পুজো শুরু হয়ে যায় প্রতিপদ থেকেই। আগের জৌলুস হয়তো এখন অনেকটাই ম্লান, কিন্তু তারপরেও মানুষ সাবেকিয়ানার টানে ভিড় জমান এই মহিষাদল রাজবাড়িতে। এখানকার প্রতিমা সাবেকি। প্রতিপদে ঘট স্থাপনার মধ্যে দিয়েই শুরু হয়ে যায় পুজো।

Continues below advertisement

থিমের টক্কর নয়, সাবেকিয়ানায় প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো দেখতে আজও ভিড় জমান দূরদূরান্তের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রতিমা দর্শন করতে আসেন ভিন রাজ্য, অন্যান্য জেলার দর্শনার্থীরাও।  প্রায় ১৭৭৬ সালে মহিষাদল রাজবাড়ির রানি জানকীর আমলে রাজবাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল। সেই সময় থেকেই মহিষাদল রাজবাড়ির ঠাকুরদালানে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। রাজত্ব চলে যাওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর জৌলুস কমেছে। কিন্তু নিয়ম আর আচারে কোনও ছেদ পড়েনি।

প্রথা অনুযায়ী মহালয়ার পরেরদিন, অর্থাৎ প্রতিপদের দিন ঘট স্থাপনা করে মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। উত্তরপ্রদেশের আদি বংশধর এই গর্গ পরিবার। আগে উত্তরপ্রদেশ থেকে ১০৮টি নীল পদ্ম আনা হত, কিন্তু এখন তা হয় না। স্থানীয়ভাবেই তা সংগ্রহ করা হয়। রাজবাড়ির রীতি মেনে রাজাদের শিকারের তলোয়ার মায়ের পায়ের তলায় রেখে পুজো করা হয়।  প্রতিমার একপাশে ঘট, অন্যপাশে ধান রাখা হয়। এই দুর্গাপুজো করার পরই শুষ্ক গ্রামে ধান ফলেছিল। তাই ভাল ফসলের আশায় আজও দেবীর পাশে ধান রাখা হয়।

Continues below advertisement

আগে মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় যাত্রাপালা, ভোগ বিতরণ, কামান দেগে সন্ধিপুজো, বিসর্জনের শোভাযাত্র সবই হত। পুজোর দিনগুলিতে ঠাকুরদালানেই যাত্রা হত। রাজবাড়ির মহিলারা পর্দার আড়াল থেকে যাত্রা দেখতেন। পুজোর দিন অনুযায়ী ভোগ রান্না হত। যেমন, ষষ্ঠীতে ছয় মন, সপ্তমীতে সাত মন, অষ্টমীতে আট মন, নবমীতে নয় মন চালের প্রসাদ তৈরি করে বিতরণ করা হত। অষ্টমীর সন্ধ্যায় কামান দেগে রাজবাড়ি সহ আশপাশের এলাকার পুজোমণ্ডপে সন্ধিপুজো শুরু হত। দশমীতে বড় নৌকায় করে শোভাযাত্রা বেরোত এবং রাজবাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া হিজলি টাইডাল ক্যানেল হয়ে গেঁওখালিতে রূপনারায়ণ নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হত। এখন সে সবই অতীত। তবে মানুষ এই রাজবাড়ির পুজো দেখতে আসেন সাবেকিয়ানার টানেই।

মহিষাদল রাজবাড়ির পুজোতে আগে পর্দার আড়াল থেকেই সবকিছু দেখতে হত বাড়ির মহিলা সদস্যদের।এখন সেই আড়াল উঠে গিয়ে সকলের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেন রাজবাড়ীর মহিলা সদস্যরা।আর এই বিষয়টি খুবই উপভোগ করেন বাড়ির মহিলারাও। আর এই সাবেকিয়ানার টানে শুধুমাত্র এলাকার বাসিন্দারাই নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন আসেন এই মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয়।