মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান: লক্ষ লক্ষ টাকায় কেনা জঞ্জাল সংগ্রহের মেটাল ভ্যান ও বর্জ্য ফেলা র ভ্যাট পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে, মুখ ঢেকেছে জঙ্গল আর আগাছায়। দুর্গাপুর পুরসভার এমন উদাসীনতা ছবিতে এখন সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা, পুরসভার নিজস্ব কোনো জায়গা বা গোডাউন নেই, তাই এমন অবস্থা, সাফাই পুরসভার। 


 দুর্গাপুরের নাগরিক জীবনকে দূষণ মুক্ত সঠিক জায়গায় নিয়ে যেতে এক পরিকল্পনা নিয়েছিল দুর্গাপুর নগর নিগম। আর নাগরিক জীবনের স্বাচ্ছন্দের মান বাড়াতে প্রথম অগ্রাধিকার ছিল শহরকে পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা। সেই মোতাবেক কেন্দ্রীয় সরকারের এই আরবান প্রকল্পের ফান্ড থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে দূর্গাপুর নগর নিগম বেশ কিছু ভ্যান কিনেছিল জঞ্জাল সংগ্রহের জন্য,. এছাড়াও কেনা হয়েছিল প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য ফেলার ভ্যাট।


সাধারণ মানুষের করের টাকায় কেনা সেই জঞ্জাল সংগ্রহের ভ্যান ও ভ্যাট এখন পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে শহর দূর্গাপুরের এক প্রান্তের জঙ্গল ঘেরা মাঠে। শহরের প্রাণকেন্দ্র সিটিসেন্টার ঢোকার মুখে ভগৎ সিং স্টেডিয়ামের পাশের এক মাঠে জঙ্গলে পড়ে রয়েছে এই সরকারি টাকায় কেনা এই জঞ্জাল সংগ্রহের ভ্যাটগুলি। রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে পড়ে পড়ে এখন এই ভ্যানগুলি ক্রমশ ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠেছে।  


এইভাবে পড়ে থাকলে ধীরে ধীরে জঙ্গলের আগাছায় ঢেকে যাওয়া এই জঞ্জাল সংগ্রহের ভ্যানগুলি কার্যত শুধু ব্যবহারের অযোগ্যই নয়, ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে, এমনটাই মত। এখানেই যে বিষয়টির শেষ তা নয়, এই একই প্রকল্পের টাকায় কেনা যে বর্জ্য রাখার নীল সবুজ বালতি ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল সেই বালতিগুলি এখন সিধু কানহু ইনডোর স্টেডিয়ামের ভেতর পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে, কার্যত হল বন্দি হয়ে রয়েছে সরকারি টাকায় কেনা এই বালতি গুলি। 


গ্রিন সিটি অথবা স্মার্ট সিটি একটা সময় প্রতিযোগিতার দৌড়ে ছিল দূর্গাপুর, আর আজ অনাদর আর নজরদারির অভাবের এই ছবি প্রমান করলো আক্ষরিক অর্থেই শহর দুর্গাপুরের নাগরিক পরিষেবা একটা বড় রকমের প্রশ্ন চিহ্নর মুখে। দুর্গাপুর নগর নিগমের মেয়র দিলীপ অগস্তির সাফাই ছিল, এই মেটাল ভ্যানগুলি রাখার কোনো জায়গা নেই দূর্গাপুর নগর নিগমের কাছে,আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা এডিডিএ কে বলা হয়েছে জমি দেওয়ার জন্য আর সেই জমি মিললেই মিটে যাবে এই সমস্যা। 


এইদিকে এই ইস্যুতে তৃণমূল পরিচালিত দূর্গাপুর নগর নিগমের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছে বিরোধীরা। বিজেপি জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দত্তের অভিযোগ, এই পুরসভা মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়নি তাই মানুষের যন্ত্রণা এরা বুঝবে না। প্রশ্ন তোলেন কেন দূর্গাপুর নগর নিগম মানুষের করের টাকায় কেনা এই জিনিসগুলো ফেলে ফেলে নষ্ট করছে। সুর চড়িয়েছে জেলা সিপিআইএম নেতৃত্ব,দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, নির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব, বাম আমলে তৈরী বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে, এলাকায় রাস্তার ধারে আবর্জনার স্তূপ, আর যার জন্য এই ছবি প্রতিনিয়ত দেখতে হচ্ছে শহরবাসীকে। এই গোটা ঘটনার জন্য দূর্গাপুর নগর নিগমের ব্যার্থতাকেই দায়ী করেন এই সিপিআইএম নেতা। 


রাজনীতির এই টানাপোড়েনে আর চাপান উততোরে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ প্রকল্পের টাকায় কেনা এই জঞ্জাল সংগ্রহের ভ্যানগুলি পড়ে রয়েছে শহরের এক কোনায় একটি মাঠের মধ্যে, স্বপ্নের সরকারি প্রকল্প আজ আগাছা আর জঙ্গলের মধ্যে মুখ ঢেকেছে। এখন দেখার বিষয় জঙ্গল আগাছায় ঢেকে যাওয়া এই জঞ্জাল সংগ্রহের ভ্যানগুলি কবে শহরের রাস্তায় নামে বা ছাদের স্থায়ী ঠিকানা পায়। প্রশ্নটা খুব একটা জটিল নয়,কিন্তু উত্তরটা একমাত্র দিতে পারে সময়। সামনের বছরে দুর্গাপুরে পুরভোট, আর নাগরিক যন্ত্রণার এই ছবি  সামনের পুরভোটে শাসকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।