কলকাতা: বিহার  ও ঝাড়খণ্ডে প্রবল বৃষ্টিতে জলস্তর বেড়ে গিয়েছে। সেই আবহে এ রাজ্যে ধাপে ধাপে জল ছাড়া পরিমাণ বাড়াচ্ছে DVC. গতকালের তুলনায় আজ বাড়তি ৮ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে। ৬৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭৩ হাজার ৬৭৫ কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। মাইথন জলাধার থেকে ৩২ হাজার ৫০০ কিউসেক জল ছাড়ছে DVC. পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়া হচ্ছে ৩৭ হাজার ৫০০ কিউসেক। রাজ্যের একাধিক জেলায় গতকালও তুমুল বৃষ্টি হয়েছে। সেই আবহে DVC-র পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বিগ্ন সকলে। দামোদর নিম্ন অববাহিকায় জলস্তর বৃদ্ধির আশঙ্কা। (DVC Water Release)

Continues below advertisement

শনিবার দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে গতকালের তুলনায় বেশি পরিমাণ জল ছাড়া হচ্ছে। আজ দুর্গাপুর ব্যারেজের অধিকাংশ লককেটই খুলে দেওয়া হয়। ফলে হু হু করে জলরাশি নেমে আসে। মাইথন এবং পাঞ্চেত থেকে মোট ৭০ হাজার কিউসেক জল এসেছে। আরও ৩ হাজার ৭৬৫ কিউসেক জল বাড়তি ছাড়া হয়। সেচ দফতর সূত্রে খবর, আজ সকাল ৭টার পর থেকে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ৭৩ হাজার ৬৭৫ জল ছাড়া হচ্ছে। (West Bengal Flood Situation)

আজ ঝাড়খণ্ডে যদি বৃষ্টি না হয়, মাইথন ও পাঞ্চেতে যদি বৃষ্টির পরিমাণ কমে, সেক্ষেত্রে DVC-র জল ছাড়ার পরিমাণ কমবে। কিন্তু আরও বেশি জল ছাড়া হলে, পূর্ব বর্ধমান, হুগলি এবং হাওড়ার নদী সংলগ্ন এলাকাগুলি নতুন করে প্লাবিত হতে পারে। বৃষ্টির পরিমাণ যদি কমে এবং DVC যদি জল ছাড়ার পরিমাণ কমায়, তাহলেই স্বস্তি মিলবে।

Continues below advertisement

DVC যখনই জল ছাড়ে, আশাপাশের জেলাগুলি সাধারণত প্লাবিত হয়। বর্ধমানে যেমন দামোদ, অজয় রয়েছে। একই ভাবে, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান যথেষ্ট প্রভাবিত হয়। প্রভাবিত হয় বাঁকাড়ার একাংশও। আজ মাইথন থেকে ৩২ হাজার ৫০০ এবং পাঞ্চেত থেকে ৩৭ হাজার ৫০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। আরও  বৃষ্টি হলে ওই পাঁচ জেলা কার্যতই বানভাসি হবে। বিপর্যস্ত হতে পারে জনজীবন।

দুর্যোগের বৃষ্টিতে কার্যত দুর্বিপাকে একাধিক জেলা। এরই মধ্যে জল ছাড়ার পরিমাণ আরও বাড়াল ডিভিসি,  যা নিয়ে রাজ্য় সরকার বনাম ডিভিসি-র মধ্যে চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। গতকাল সকালে এক্স হ্যান্ডেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় লেখেন, 'বিজয়া দশমী মানে দুর্গাপুজো শেষ। এটা আনন্দের সময়। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে উৎসবের এই শেষ পর্ব শান্তিতে পালন করতে না দিয়ে, DVC ৬৫ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে এবং তা রাজ্য় সরকারকে না জানিয়ে। এই বেপরোয়া পদক্ষেপ, উৎসবের সময়ে মানুষকে দুঃখ-যন্ত্রণার দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। হুঁশিয়ারির সুরে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন,স্পষ্টভাবে বলছি, আমি কাউকে বাংলার 'বিসর্জন' দিতে দেব না। মানুষের বিরুদ্ধে হওয়া প্রতিটা ষড়যন্ত্রের জবাব পূর্ণ শক্তি দিয়ে দেওয়া হবে'। 

DVC সূত্রে পাল্টা দাবি করা হয়েছে, রাজ্য সরকারের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুল। তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় জল কমিশন অর্থাৎ CWC-র আওতায় রয়েছে DVC, কেন্দ্র, ঝাড়খণ্ড সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার। নিয়ম অনুযায়ী, সেখানে ১২ ঘণ্টা আগে থেকেই জানানো হয় মাইথন ও পাঞ্চেতের জলাধারে ঠিক কত পরিমাণ জল রয়েছে এবং কত পরিমাণে জল ছাড়া হবে সেখান থেকে। এই কমিটিতে রয়েছেন মুখ্যসচিব, সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির জেলাশাসক সহ সেচ দফতরের আধিকারিকেরাও। কমিটির সকল সদস্যকে জানিয়েই জল ছাড়া হয়। 

অন্য দিকে, আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্তটি ঝাড়খণ্ড-ওড়িশা সীমানায় অবস্থান করছে। সেখানেই নিম্নচাপে পরিণত হচ্ছে সেখানে। তার জেরেই কলকাতার আকাশ সকাল থেকে মেঘলা এবং কোথাও কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে। আজ ভারী বৃষ্টি হতে পারে মুর্শিদাবাদে। দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে বিক্ষিপ্ত ভাবে। এই পরিস্থিতি রবিবারও বজায় থাকবে। রবিবার বিকেল থেকে সন্ধের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হতে পারে।