কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: দুর্গাপুজোর মনখারাপ যেন মিটিয়ে দেয় লক্ষ্মীপুজো। মা দুর্গা চলে যাওয়ার পরে যখন মনখারাপ হয়ে যায় গোটা বাংলার, তখন সেই ক্ষতে যেন প্রলেপ দেয় লক্ষ্মীপুজো। আর পূর্ব বর্ধমানের মির্জাপুরে ২ ভাইয়ের হাত ধরে, গত ৫০ বছর থেকে এলাকার সবাই মেতে ওঠে লক্ষ্মীপুজো নিজে। 

Continues below advertisement


মির্জাপুরের দাস পরিবারের পূর্বপুরুষ তুলসীচরণ দাসের হাত ধরে শুরু হয় পুজো। দাস পরিবারের হাতে ভাজা মুড়ির ব্যবসা ছিল। ব্যবসায় শ্রীবৃদ্ধির আশায় শুরু হয় লক্ষ্মী পুজো। বর্তমানে মেশিন মুড়ির সঙ্গে আর প্রতিযোগিতায় পেরে ওঠে না হাতে ভাজা মুড়ি। বর্তমানে ভাজা মুড়ির কদর কমেছে তাই হাতে ভাজা মুড়ির ব্যবসা না থাকলেও, আজও সেই পুরনো রীতি মেনেই চলে পুজোপাঠ আর এই দুই ভাইয়ের লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করে মেতে ওঠেন সমগ্র মির্জাপুরবাসী।


দাস পরিবারের সদস্য জগদ্ধাত্রী দাস জানান, দাস পরিবারের পূর্বপুরুষ তুলসী চরণ দাসের ছিল হাতে ভাজা মুড়ির ব্যবসা। ব্যবসায় লক্ষ্মী লাভের আশায় আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে তিনি শুরু করেছিলেন দাস পরিবারের লক্ষ্মীপুজো। মেশিনে ভাজা মুড়ি দৌরাত্ম্যে কমেছে হাতে ভাজা মুড়ির চল। আগে নিজের হাতে ধান সিদ্ধ করে অন্যের মিল থেকে ধান ভাঙিয়ে চাল তৈরি করে আনতেন তিনি সেখান থেকে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছেন নিজেদেরই রাইসমিল। তাই প্রথম দিকে ছোট করে পুজো হলেও বর্তমানে বেড়েছে পুজোর বহর,জাঁকজমক। পরবর্তীতে ভাগ হয়ে যায় পরিবার এবং পৃথক পৃথক ভাবে লক্ষ্মী পুজো শুরু করেন দাস পরিবারের বর্তমান সদস্য তথা দুই ভাই চিত্তরঞ্জন দাস ও সত্যরঞ্জন দাস। সেই থেকেই এলাকায় দুই ভাইয়ের পুজো নামে পরিচিত দাস পরিবারের এই লক্ষ্মীপুজো।


তবে দাস পরিবারে আগে শুধু লক্ষ্মীপুজো হলেও বর্তমানে চিত্তরঞ্জন দাসের বাড়িতে হয় লক্ষ্মীনারায়ণের পুজো। তার পিছনেও রয়েছে এক অনন্য কাহিনী। পরিবারের বর্তমান সদস্য জগদ্ধাত্রী দাস বলেন,পরিবারের রীতি মেনে পূর্বে শুধু লক্ষ্মীপুজো হলেও স্বপ্নাদেশ পেয়ে বাড়ির উঠানে নারায়ণ বিগ্রহ পেয়ে একসঙ্গে লক্ষ্মী-নারায়ণ পুজো শুরু করা হয়। সেই থেকে আজও লক্ষ্মীনারায়ণ পুজো হয়ে আসছে। দাস বাড়ি বর্তমান প্রজন্মের দুই সদস্য সুমনা দাস ও পিয়ালি দাস জানান, সারা বছর ধরে লক্ষ্মীপুজোর এই চারটে দিনের জন্য অপেক্ষায় থাকেন পরিবারের সকল সদস্যরা।আত্মীয়স্বজনদের সমাগমে এইদিনগুলো আনন্দ ও হৈ-হুল্লোড় করে কেটে যায়।দুই বাড়িরই পুজোর প্রস্তুতি থেকে ভোগ রান্না পরিবারের সকল সদস্যরা মিলেই করা হয়।শেষদিন হয় অন্নকূটের আয়োজন।