বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুর: খাল কাটাই হয়নি! অথচ ১০০ দিনের প্রকল্পের সাফল্যের ফলক বসিয়ে দেওয়া হয়েছে! এই অভিযোগেই হইচই চলছে পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের তৃণমূল পরিচালিত বৃন্দাবনচক পঞ্চায়েতে। কেন্দ্রীয় দলের জেলা সফরের মধ্যে সরকারি প্রকল্পের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তরজায় জড়িয়েছে বিজেপি ও তৃণমূল। 


বাংলায় বলে - খাল কেটে কুমির ডাকা! আর পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটে খাল কাটার নামে যে কাণ্ড ঘটছে, তাতে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল এল বলে, সুর চড়াচ্ছে বিরোধীরা। 


কোলঘাটের বৃন্দাবনচক পঞ্চায়েতে, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে  যদুপুর পুল থেকে রুইদাস পাড়া অবধি প্রায় ৪ কিলোমিটার খাল কাটার কথা উল্লেখ আছে এই ফলকে সাদা রং লেপে দেওয়ায় প্রকল্পের জন্য অনুমোদিত অর্থ কত, তা অবশ্য পড়া যাচ্ছে না। প্রকৃত খরচ কত হল, সে জায়গাও খালি


কাজ শুরুর তারিখ ২ নভেম্বর ২০২১, কিন্তু কাজ কবে শেষ হল, তার অবশ্য উল্লেখ নেই ফলকে। এবার খালের অবস্থাটা দেখুন। কচুরি পানায় ভরে আছে খাল। তাহলে কাজ কোথায় হল? সরকারি প্রকল্পের প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা কোথায় গেল? এই প্রশ্নেই হইচই শুরু হয়েছে কোলাঘাটের বৃন্দাবনপুর পঞ্চায়েতে!


কোলাঘাটের কৃষক সংগ্রাম পরিষদের  সম্পাদক নারায়ণ নায়েকের কথায়, গত পরশু ফলকটি কেউ বা কারা লাগিয়েছে। কাজ না করে কাজের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে কী করে ফলক লাগানো হয় তা নিয়ে আমরা বিভ্রান্ত। খাল খনন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ ঘিরে আঙুল উঠছে তৃণমূল পরিচালিত বৃন্দাবনচক গ্রাম পঞ্চায়েতের ভূমিকায়।


কোলাঘাট বৃন্দাবনচকের পঞ্চায়েত প্রধান হিমাংশুশেখর নায়েকের কথায়, সেই সময় জল জমে ছিল গোটা এলাকায়। সেই জন্য খালের মাটি কাটা সম্ভব হয়নি। খালের দু'ধারে প্রচুর পরিমাণে ঝোপঝাড় হয়ে গিয়েছিল,  সেটা পরিষ্কার  করতে যা খরচ হয়েছে বাকি টাকা ফান্ডে পড়ে রয়েছে। 


কিন্তু, খালের দু’পারের ছবিটা দেখিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের যুক্তিতে অবশ্য নরম হচ্ছে না বিজেপি। খাল কাটা নিয়ে ১০০ দিনের প্রকল্পে দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছে তারা। শাসকদলও পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে।


তমলুক সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সম্পাদক দেবব্রত পট্টনায়ক বলছেন, এরা চোর এদের দল এদের কাজই হল এটা। আজকে যখন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল অঞ্চলে অঞ্চলে যাচ্ছে। তাদের টিম অনুসারে কি কি কাজ হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করবে। তাই রাতের অন্ধকারে লাগিয়ে দিয়ে চলে গেছে। তারা সম্পূর্ণভাবেই স্কিমটিকে লুট করে নিয়েছে। কেন্দ্রীয়  সরকারের ভয়ে রাতের অন্ধকারে ফলক লাগাচ্ছে। 


কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূল নেতা ও সভাপতি সুরজিৎ মান্নার দাবি, এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ। সেন্ট্রাল টিম আসবে তাই ফলকটি দেখানো যাবে না। কাজের সময় ফলক ছিল হয়তো ফলকটি ভেঙে গেছে। তাই নতুন করে বসানো হয়েছে। আর বিজেপি যে অভিযোগ করছে তার সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।


আবাস যোজনা থেকে গ্রাম সড়ক যোজনা, কেন্দ্রীয় সরকারের নানা প্রকল্পের নাম বদল ঘিরে তৃণমূল-বিজেপির তরজা চলছে বহুদিন ধরে। বিভিন্ন প্রকল্পের অবস্থা খতিয়ে দেখতে গ্রামে গ্রামে ঘুরছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। তারওপর নন্দীগ্রামের একাধিক জায়গায় প্রকল্পের নাম বদলানোর ঘটনা নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি! এবার খাল না কেটেই অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগে বিতর্ক বাধল সেই পূর্ব মেদিনীপুরেই।