ঋত্বিক প্রধান, মারিশদা: ফের নির্বাচন (election) ঘিরে উত্তপ্ত রাজ্যের নানা প্রান্ত। বাদ গেল না মারিশদা (marishda) সমবায় (cooperative) কৃষি উন্নয়ন সমিতির ভোটও। বিজেপির বুথ ভাঙচুরের অভিযোগে আঙুল উঠল তৃণমূলের (TMC) দিকে। নাটক করছে বিজেপি (BJP), অভিযোগ উড়িয়ে দাবি জোড়াফুল শিবিরে। 


কী হয়েছে?
মারিশদা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির মোট ৪১টি আসনে ভোট ছিল এদিন। প্রার্থিসংখ্যা ছিল ৮৪। এর মধ্যে ৪১ জন তৃণমূলের, বাকিরা লড়ছিলেন বিজেপি এবং সিপিএমের টিকিটে। কিন্তু ভোট ঘিরে দফায় দফায় অশান্তির জেরে সপ্তাহান্তের চেনা মেজাজ ভেঙে খান খান হয়ে যায়। বিজেপি অভিযোগ আনে, তাদের সব কটি বুথ ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিজেপির বক্তব্যকে সমর্থন করেন স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। জানান, সন্ত্রাস চালিয়ে কার্যত ভোট লুঠ করা হয়েছে। নিজেদের রাজত্ব কায়েম করার জন্য ও সমবায় সমিতি নিজেদের দখলে রাখতেই তৃণমূল এমন করেছে, অভিযোগ সিপিএমের। পরিস্থিতি একসময়ে এতটাই তেতে ওঠে যে মারিশদা থানার পুলিশবাহিনী গিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনে। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, তারা অশান্তিতে জড়ায়নি। বরং এদিন যা হয়েছে সে জন্য বিজেপির দিকেই আঙুল তুলেছে তারা। জোড়াফুল শিবিরের বক্তব্য, বিজেপি জানে তাদের হার নিশ্চিত। সেটা বুঝেই নাটক করছে। ঘটনাচক্রে এদিন পুরসভার উপনির্বাচন ঘিরে অশান্তির খবর এসেছে রাজ্যের অন্য দুই প্রান্ত থেকেও।


আসানসোল উপনির্বাচন


আজ আসানসোল পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের উপ নির্বাচন ঘিরে অশান্তি বাধে বিভিন্ন জায়গায়। জামুড়িয়ার মণ্ডলপুরে ৮২ নম্বর বুথে বিজেপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে মারধর করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসকদল। অন্যদিকে, আসানসোলে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে জে কে নগর মোড়ে দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্ণণ ঘোড়ুইকে বাধা দেয় পুলিশ। বিজেপি বিধায়ক অভিযোগ তোলেন, জামুড়িয়ার তৃণমূল বিধায়ক হরেরাম সিংকে ঢুকতে দিলেও, তাঁকে আটকাচ্ছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে থাকা বিজেপি ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি বেধে যায়।


বনগাঁর উপনির্বাচন


অন্যদিকে, বনগাঁ পুরসভার একটি ওয়ার্ডের উপনির্বাচন ঘিরেও সকাল থেকে দফায় দফায় অশান্তির খবর সামনে আসতে থাকে। ভোট দিতে পারেননি বলে দাবি করেন খোদ কংগ্রেস প্রার্থী। উপ নির্বাচনে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে পথে নামে বাম-বিজেপি-কংগ্রেস। কর্মী, সমর্থকদের নিয়ে বনগাঁর বাটার মোড়ে বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখান দুই বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া ও স্বপন মজুমদার। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে যশোর রোড। এরপর বনগাঁর রামনগরে যশোর রোড অবরোধ করেন সিপিএম কর্মীরা। পরে বাটার মোড়ও অবরোধ করা হয়। এরপর পথে নামে কংগ্রেস। বাটার মোড় অবরোধ করেন কংগ্রেস কর্মীরা।
  বনগাঁর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের উপ নির্বাচন ঘিরে দফায় দফায় তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ হয়। বহিরাগতদের এনে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। বনগাঁর বাটার মোড়ে বসে প্রায় সোয়া একঘণ্টা বিক্ষোভ দেখান দুই বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া ও স্বপন মজুমদার। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে যশোর রোড। পেট্রাপোল সীমান্তে যাওয়ার রাস্তায় তৈরি হয় যানজট। উপ নির্বাচনে বুথ দখল করতে না পেরে বিজেপির নাটক বলে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের। পুনর্নির্বাচনের দাবিতে মহকুমাশাসকের কাছে যাব, জানান বিজেপি বিধায়করা।
  ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের উপ নির্বাচনে বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের বুথে বহিরাগতদের জমায়েত, ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ ঘিরে ধুন্ধুমার বাধে। বুথের বাইরে চোর চোর স্লোগান তোলেন বিজেপি কর্মীরা। ঘটনাস্থলে হাজির তৃণমূল নেতাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পাল্টা বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদারের ওপর হামলার চেষ্টা, বাঁচাতে গেলে বিধায়কের নিরাপত্তারক্ষীদের মারধরের অভিযোগ তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। এরপরই বিজেপি ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি বেধে যায়। বিজেপি সমর্থকদের দিকে তেড়ে যান তৃণমূল প্রার্থী পাপাই রাহা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
  অন্যদিকে, কবি কেশবলাল বিদ্যাপীঠেও উত্তেজনা ছড়ায়। বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়ার উপস্থিতিতে বুথের বাইরে বহিরাগতদের জমায়েতের অভিযোগ তৃণমূলের প্রার্থী পাপাই রাহার। পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান বিজেপি বিধায়ক। এরপর তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিজেপি বিধায়ককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তৃণমূল কর্মীরা। বহিরাগতদের আনার অভিযোগ অস্বীকার করে গেরুয়া শিবির।
   সব মিলিয়ে দিনভর উত্তেজনা দিকে দিকে। 


আরও পড়ুন:রাস্তার ধারে পড়ে ছিল বস্তা, আচমকা নড়ে উঠতে চাঞ্চল্য, ভিতর থেকে উদ্ধার বৃদ্ধা