কলকাতা: ঝাঁ চকচকে রাস্তা, কয়েক হাত দূর দূরে বাতিস্তম্ভ, শহর কলকাতার ভোল পাল্টে দিতে চেষ্টায় খামতি নেই। তার পরেও শহরে তড়িদাহত হওয়ার ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না (Electrocution Death)। ধর্মতলা থেকে দমদম, হাওড়া থেকে উত্তর ২৪ পরগনা, বর্ষার জমা জলে পড়ে থাকা খোলা তারে পা রেখে অথবা ল্যাম্পপোস্ট ছুঁয়ে ফেলে বছর বছর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলেছে। তাতে নয়া সংযোজন হরিদেবপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বারো বছরের বালকের মৃত্যুর ঘটনা। এরকম আরও কত মৃত্যুর পর হুঁশ ফিরবে প্রশাসনের? কবে নেওয়া হবে ব্যবস্থা? সেই প্রশ্নই জোরাল হচ্ছে বিভিন্ন মহলে (Kolkata News)।


বছর বছর তড়িদাহতের ঘটনা


রবিবার সন্ধেয় হরিদেবপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া নীতীশ যাদবের। পড়া জেনে নেওয়ার পাশাপাশি, পুজোর প্রসাদ দিতে গৃহ শিক্ষিতার বাড়ি যাচ্ছিল সে। তখনই ল্যাম্পপোস্টে হাত পড়ে বেঘোরে মৃত্যু হয় তার। ঘটনাস্থল থেকে যে ছবি উঠে আসে, তাতে দেখা যায়, প্রসাদের প্যাকেট পড়ে রয়েছে রাস্তায়, পা থেকে ছিটকে পড়া চটিজোড়াও উল্টে রয়েছে।


১২ বছরের বালকের এই পরিণতি এতটাই আতঙ্ক তৈরি করেছে যে সোমবারই স্কুলে তার সহপাঠীদের এনিয়ে সতর্ক করেছেন প্রধান শিক্ষক। ক্লাসে তাঁকে বোঝাতে হয়েছে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া থেকে বাঁচতে কী কী করণীয়। পুঁটিয়ারি ব্রজমোহন তিওয়ারি ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক তমালকৃষ্ণ কর বলেন, "ওকে তো ফেরাতে পারব না, এদের বোঝাচ্ছি।"


আরও পড়ুন: WB Electrocution Deaths: ইতিউতি ছড়িয়ে মৃত্যুফাঁদ, শিশু থেকে প্রৌঢ়, গত এক বছরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একাধিক মৃত্যু


বর্ষায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণহানি এখন যেন কার্যত ফি বছরের ঘটনা হয়ে উঠেছে। ২০১৬ সালে ত্রিফলা বাতির নীচ থেকে বিপজ্জনকভাবে বেরিয়ে থাকে বিদ্যুতের তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ১৪ বছরের যশ বেঙ্গানির। গতবছর সেপ্টেম্বরে উত্তর ২৪ পরগনার খড়দায়, এক সরকারি আবাসনে, জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় একই পরিবারের তিনজনের। এক লহমায় শেষ হয়ে যায় মা-বাবা ও ছেলের জীবন। 


পরের দিনই দমদম মতিঝিলে, টিউশনে যাওয়ার সময়, জলমগ্ন রাস্তায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী দুই কিশোরীর।  সেবছরই মে মাসে রাজভবনের সামনের দৃশ্য দেখে শিউড়ে উঠেছিলেন শহরবাসী। রাজভবনের নর্থ গেটের সামনে হাঁটু জল ভেঙে যাওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ২৫ বছরের ঋষভ মণ্ডলের। জমা জলেই ভাসতে থাকে তাঁর মৃতদেহ। 


কবে হুঁশ ফিরবে প্রশাসনের!


এর কিছু দিনের মধ্যে শিবপুরে জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক কিশোরের। ২০২০ সালের ২০ অগাস্ট মাসে শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের কাছে, জমা জলে পড়ে থাকা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই যুবকের মৃত্যু হয়। এবছরও বর্ষা আসতেই ফের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ গেল এক বালকের। কিন্তু, এভাবে আর কত প্রাণ গেলে হুঁশ ফিরবে প্রশাসনের? সেই প্রশ্নই তুলছে স্বজনহারা পরিবার।