সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: ১১ বছর পর, বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্ত (Tapan Dutta) খুনে সিবিআই (CBI) তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High court)। এরপর থেকে তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যাবে সিবিআই (CBI), নির্দেশ বিচারপতি রাজশেখর মান্থার। যেখানে তদন্ত করা প্রয়োজন, সেখানে ফের তদন্ত করবে সিবিআই (CBI), জানিয়েছেন বিচারপতি।


৬ মে খুন হন বালির তৃণমূল নেতা: জলাভূমি ভরাটের প্রতিবাদ করায়, ২০১১ সালের ৬ মে খুন হন বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্ত। প্রথমে বালি থানার পুলিশ তদন্ত করলেও পরে তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডি-কে। এদিন নিহত তৃণমূল নেতা প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেন, স্ত্রী প্রতিমা দত্ত সিবিআইয়ের প্রতি আস্থা রয়েছে। ঘরে বন্দি থাকি, অপরাধীরা বাইরে ঘুরে বেড়ায়। এবার মনে হচ্ছে অপরাধীরা শাস্তি পাবে।


এক যুগ পার: ১১ বছর পর বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্ত খুনে CBI তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। নিহত তৃণমূল নেতা তপন দত্তের স্ত্রী প্রতিমা দত্তের কথায়, ১২ বছর পর CBI তদন্ত পেলাম, আমার মনে হল এই প্রশাসনের মুখে থাপ্পড় মারতে পারলাম। একটা থাপ্পড আমি প্রশাসনের মুখে মারতে পেরেছি।


২০১১ সালের ৬ মে, খুন হন বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্ত। ঘটনার ৭ দিনের মাথায় তদন্তভার নেয় CID। এরপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। নিহত তৃণমূল নেতা তপন দত্তের স্ত্রীর করা CBI তদন্তের দাবিতে মামলা কলকাতা হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে ফের কলকাতা হাইকোর্টে আসে।


এই মামলায় এদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা বলেন, হাওড়া আদালত নয়, এরপর থেকে এই মামলার শুনানি হবে CBI’র বিশেষ আদালতে। CID’র কাছে মামলা সংক্রান্ত যে সব নথি, তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, তা CBI’কে দিতে হবে। প্রয়োজন মনে করলে CBI তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। তদন্তে কোনও খামতি থাকলে তাও পুনরায় করতে পারবেন CBI।


আদালতের পর্যবেক্ষণ: বলা হয়, আদালতের সামনে পেশ করা তথ্য-প্রমাণ থেকে এটা পরিষ্কার যে, এই মামলার ক্ষেত্রে CID’র ওপর ওপর তদন্ত করেছে। গভীরতায় গিয়ে তদন্ত করেনি। রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থা কার্যকরী তদন্ত করতে এবং আসল অপরাধীদের ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই মানুষের মনে তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আস্থা বজায় রাখতে এক্ষুনি তদন্তকারী সংস্থা বদলানোর প্রয়োজন রয়েছে। 


তদন্ত এবং বিচারপ্রক্রিয়ার স্বাধীনতা এই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে খুবই গুরত্বপূর্ণ, যেখানে প্রভাবশালী ব্যক্তি যেমন জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম জড়িয়ে থাকে। 


এই ধরনের ব্যক্তিরা তদন্ত এবং বিচারপ্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ এবং প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন এবং যার ফলে মামলা ভুলপথে চালিত হয়। ষড়যন্ত্র এবং দ্বন্দের কারণে এই খুন হয়ে থাকতে পারে।  যারা বিপুল অর্থ এবং রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছিলেন তাদের মাঝে তপন দত্ত হয়ত বাধা সৃষ্টি করেছিলেন। 


এই ব্যক্তিরা রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী এবং ভাল যোগাযোগ রয়েছে। একটা স্বচ্ছ এবং কার্যকরী তদন্ত হয়ত একটা পোকাভর্তি পাত্রের মুখ খুলে দিতে পারে অথবা কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির ভূমিকা প্রকাশ করতে পারে। তাই কিছু ব্যক্তি এবং তাদের জঘন্য কাজকর্মকে আড়াল করার জন্য রাজ্য পুলিশ এবং তদন্তকারী সংস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল, সেই সম্ভাবনা বাতিল করা যায় না। 


৬ মাসের মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ। নিহত তৃণমূল নেতা তপন দত্তের মেয়ে প্রিয়ঙ্কা দত্তের কথায়, এরা প্রভাবশালী, রাজ্যের মন্ত্রী থেকে জেলার নেতা, সবাই জড়িত। হাওড়া কোর্টে মাকে ভয় দেখিয়েছে। রাস্তায় আমাদের হুমকি দিয়েছে। এখন এই মামলায় CBI কী পদক্ষেপ করে, সেদিকেই সবার নজর।