সুজিত মণ্ডল, ঝিলম করঞ্জাই, ও সনত্‍ ঝা, নদিয়া ও কলকাতা: স্বাস্থ্যসাথীতে চিকিৎসা হয়েছে। কিন্তু প্রাপ্য টাকা মেলেনি হাসপাতালের। সামান্য কিছু টাকা নয়, স্বাস্থ্যসাথীতে রাজ্যের কাছে দেড় কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বলে দাবি নদিয়ার কল্যাণীর ওই হাসপাতালের। কল্যাণীর গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এমনই দাবি করেছে। টাকা না পাওয়ায় ধাক্কা লাগছে পরিষেবায়। ওষুধ থেকে শুরু করে চিকিৎসা সরঞ্জাম-সব কিছু কেনার ক্ষেত্রেই অসুবিধা হচ্ছে।      


পরিষেবায় ধাক্কা?
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে সরকারের থেকে দেড় কোটি টাকা এখনও না পাওয়ায় একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে কল্যাণীর গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতালের অন্দরে। এমন দাবি করেছেন খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই। রাজ্যে শুধুমাত্র হার্টের চিকিত্‍সার একমাত্র সরকারি কেন্দ্র হল কল্যাণী স্টেশনের পূর্বদিকে থাকা এই গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল। উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, হুগলির মতো আশেপাশের জেলার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ থেকেও বহু রোগী এখানে চিকিত্‍সা করাতে আসেন। কিন্তু স্বাস্থ্য সাথীর টাকা না মেলায় সেই হাসপাতালেরই এখন সঙ্কটজনক অবস্থা। 


কোন টাকা বাকি?
সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দু’রকমের হয়। ইনসিওরেন্স এবং অ্যাসিওরেন্স। ইনসিওরেন্সের ক্ষেত্রে টাকা মেটায় বিমা কোম্পানি। আর অ্যাসিওরেন্সের টাকা দেয় সরকার। গান্ধী  মেমোরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে অ্যাসিওরেন্সের দেড় কোটির বেশি টাকা বকেয়া রয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের কাছে। ফলে ওষুধ থেকে চিকিত্‍সা সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে যেমন অসুবিধা হচ্ছে, তেমনই লক্ষ লক্ষ টাকা বকেয়া পড়ে গেছে ভেন্ডারদের। কল্যাণীর গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতালের সুপার গোপাল দাস বলেন, 'দেড় কোটির ওপর বেশি টাকা বকেয়া। সমস্ত পরিষেবা চলছে ঠিকই। অনেক ওষুধ দিতে পারছি না। এক মাসের জায়গায় ১৫ দিনের ওষুধ দিচ্ছি।' কোথায় কত বকেয়া, সেটাও জানিয়েছেন তিনি।


রোগীদের দাবি:
স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর প্রভাব যে পড়তে শুরু করেছে, তা হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা রোগীদের কথাতেই স্পষ্ট। রোগী ও মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা অলোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'বেলডাঙা থেকে এসেছি। ব্যবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। আগে সব ওষুধ দিত। লিখছে ৯টা। দিচ্ছে ৫টা।' মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা কৈলাস প্রামাণিক বলেন, 'প্রত্যেকবার আসছি। এতদুর থেকে আসছি। দিন দিন খারাপ হচ্ছে পরিষেবা। বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। ফ্রি বলে কিছুই হচ্ছে না।'


স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে সরকারের কাছে ‘বকেয়া সরকারি হাসপাতালের’ পরিষেবা ব্যাহতের আশঙ্কা সুপারের যার জেরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। একে অপরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন কল্যাণীর বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায় এবং গয়েশপুরের তৃণমূল নেতা ও পুরপ্রধান সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানানো হয়েছে, কল্যাণীর গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতালের বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। 


আরও পড়ুন: ডিজে বাজানোর প্রতিবাদ, হেনস্থা খোদ বিডিওকে