প্রকাশ সিনহা, কলকাতা : রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর মোড় । ED-র দাবি, যাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করা হয়েছে সেই অভিযোগকারীরই খোঁজ মিলছে না ! ED সূত্রে খবর, ধাপা দুর্গাপুরের বাসিন্দা তৃণমূল নেতা তারক মণ্ডলই অভিযোগকারী ছিলেন। চলতি মাসের গোড়ায় নোটিস পাঠানো হলেও তিনি হাজিরা দেননি, ফোনেও সাড়া মেলেনি। ED-র অনুমান, ভবানীপুর থানায় তারক অভিযোগ জানালেও, তাঁর পিছনে অন্য কেউ রয়েছে। বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের হদিশ পেতে ধাপার ওই তৃণমূল নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন বলে মনে করছেন ED-র আধিকারিকরা।
ইডি সূত্রে খবর, কলকাতার প্রগতি ময়দান থানার ধাপা এলাকার দুর্গাপুরের তৃণমূল নেতা তারক মণ্ডলকে নোটিস পাঠিয়েছে ইডি। এদিন ধাপায় তারকের বাড়ি তালাবন্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এই মাসের প্রথম সপ্তাহে রেশন দুর্নীতি মামলায় তারককে নোটিস পাঠানো হয়েছিল। তিনি সাড়া দেননি। তাঁকে একাধিক বার ফোন করলেও, তিনি ফোন তোলেননি বলে দাবি কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রের। ইডির আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, যে ৫টি এফআইআরের ভিত্তিতে রেশন মামলায় এফআইআর ইডি করেছিল, তারমধ্যে একটি ছিল ভবানীপুর থানার এফআইআর। সেই এফআইআরের অভিযোগকারী ছিলেন এই তারক মণ্ডল। তদন্তকারীদের দাবি, তারক মণ্ডল অভিযোগ করেছিলেন, কিন্তু তাঁর পিছনে অন্য কেউ থাকতে পারেন। তাই জন্য তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তাঁরা।
যদিও এক কর্মী ফোনে এবিপি আনন্দর প্রতিনিধির সঙ্গে তারক মণ্ডলের কথা বলান। তিনি দাবি করেন, তাঁর শরীর খারাপ। তিনি ইডির কোনও নোটিস পাননি।
চলতি মাসেই গোড়ার দিকে রেশন দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে ফের আদালতে ভর্ৎসনার মুখে পড়ে ED। জেলবন্দি প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী, জ্য়োতিপ্রিয় মল্লিকের হিসেব বহির্ভূত সম্পত্তির খতিয়ান পেতে, কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে শিকড়ে পৌঁছনোর পরামর্শ দেন বিশেষ আদালতের বিচারক।
২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করে ইডি। বিচার ভবনে ছিল, প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর জামিনের আর্জির শুনানি। ইডি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের জামিনের আর্জির বিরোধিতা করলে, বিচারক প্রশান্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তকারী অফিসার থেকে আইনজীবীকে। রেশন দুর্নীতির উৎসের কথা জানতে চেয়ে, ইডির স্পেশাল কোর্টের বিচারক প্রশ্ন করেন, নদিয়ার যে FIR থেকে এই সংক্রান্ত তদন্ত শুরু হয়েছিল, সেখানে চুরির অভিযোগ ছিল। সেটাকে কেন ‘দুর্নীতি’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে ?
এর আগের শুনানিতে ইডির তরফে আদালতে দাবি করা হয়, রেশন দুর্নীতির তদন্তে একাধিক সরকারি নথি এবং সরকারি অফিসারের সিল পাওয়া গিয়েছে। সেই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার বিচারক প্রশ্ন করেন, যদি দুর্নীতি হয়, তাহলে আজ পর্যন্ত ওইসব সরকারি অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি কেন ? যাঁরা রেশন কম পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন, তাঁদের সঙ্গে কি কথা বলেছিলেন? জবাবে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তকারী অফিসার বলেন, আমরা চুরির তদন্ত করতে গিয়ে রেশন-দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রচুর নথি পেয়েছি। সেইসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সেইসঙ্গে ইডির আইনজীবী বলেন, বিভিন্ন লাইসেন্সহীন দোকান থেকে রেশন সামগ্রীর একাধিক বস্তা পাওয়া গেছে। অথচ বস্তা চুরির কোনও অভিযোগ হয়নি। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নির্দেশেই গোটা চক্র কাজ করছিল বলে দাবি করা হয় কেন্দ্রীয় এজেন্সির তরফে।
একথা শুনে বিচারক প্রশ্ন করেন, ডিস্ট্রিবিউটার বা মিল মালিক যদি চুরি করে থাকেন, তাহলে মন্ত্রী কীভাবে যুক্ত হলেন ? মেনে নিলাম ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের থেকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আত্মীয়দের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে। কিন্তু, সেই টাকা যে রেশন দুর্নীতিরই, তার প্রমাণ কোথায় ? অন্য কোনও দুর্নীতির টাকাও তো হতে পারে? এরপরই বিচারক বলেন, আপনারা শিকড়ে গিয়ে তদন্ত করুন। গঙ্গাসাগর নয়, গঙ্গোত্রীতে শুরু করুন। রেশন দুর্নীতি হলে সেটার শুরু কোথায়, তা খুঁজে বের করুন।
জবাবে ইডির আইনজীবী বলেন, আমরা গঙ্গোত্রী থেকে গঙ্গাসাগর নয়, গঙ্গাসাগর থেকে গঙ্গোত্রী পৌছানোর চেষ্টা করছি। যখন আমরা গঙ্গোত্রীর খোঁজ করতে গেলাম, দেখলাম সেটা আরবল্লী নয়, হিমালয়।