পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা : পাসপোর্ট জালিয়াতির অন্যতম মাথা মনোজ গুপ্ত গ্রেফতার। বেহালার সখেরবাজারে ট্রাভেল এজেন্সির আড়ালে চলত পাসপোর্ট জালিয়াতির কারবার। পাসপোর্ট জালিয়াতিকাণ্ডে এটি সপ্তম গ্রেফতার। গতকাল উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার চাঁদপাড়া স্টেশন রোড এলাকা থেকে জালিয়াতিকাণ্ডের অন্যতম মাথা মনোজ গুপ্তকে গ্রেফতার করে লালবাজারের গোয়েন্দা পুলিশ। আজই তাঁকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হবে। তার আগে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন গোয়েন্দারা। কতজনের জাল পাসপোর্ট তৈরি করেছেন মনোজ, কত পরিমাণ আর্থিক লেনদেন হয়েছে, এই পাসপোর্ট জালিয়াতির জাল ঠিক কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত- তা জানারই চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারী গোয়েন্দারা। 


মোটা টাকার বিনিময়ে জাল নথি দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করে দিতেন মনোজ। মনোজেরই এজেন্সিতে কাজ করতেন পাসপোর্ট-কাণ্ডে ধৃত দীপঙ্কর দাস। উত্তর ২৪ পরগনার চাঁদপাড়া থেকে মনোজকে গ্রেফতার করেছে লালবাজারের গোয়েন্দারা। পুলিশ সূত্রে খবর, বেহালার শীলপাড়ার বাসিন্দা মনোজ সখেরবাজারে ট্রাভেল এজেন্সির অফিস খুলে জাল নথি দিয়ে পাসপোর্ট বানাতেন। তার জন্য মোটা টাকাও নিতেন মনোজ। পাসপোর্ট জালিয়াতিকাণ্ডে আরেক ধৃত পর্ণশ্রীর বাসিন্দা দীপঙ্কর দাস মনোজের অফিসেই ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের কাজ করতেন। 


মনোজ গুপ্ত বিভিন্ন লোকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে জাল পাসপোর্ট তৈরি করতেন। কাদের জাল পাসপোর্ট তৈরি হবে, কোন ভুয়ো নিথির বিনিময়ে, কত টাকার রফায় জাল পাসপোর্ট তৈরি করা হবে, সবটাই নখদর্পণে থাকত এই মনোজের। লালবাজারের গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পাসপোর্ট জালিয়াতি করার ব্যাপারে এই মনোজ একজন কিংপিন। অন্যদিকে ধৃত মনোজের মায়ের কথায় তিনি কিছুই জানতেন না সেভাবে। এদিক ওদিক থেকে কানে এসেছিল ছেলের ব্যাপারে কিছু কথা। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কাজ করতেন মনোজ। জাল পাসপোর্ট তৈরি করেন একথা জানার পর থেকেই মা এসব কাজ করতে বারণ করতেন ছেলেকে। যদিও মায়ের বারণ শোনেননি তিনি। তবে বাড়িতে কোনও জাল পাসপোর্ট তৈরির কাজ হতো না বলেই জানিয়েছেন ধৃত মনোজ গুপ্তর মা। জানা গিয়েছে, মনোজের বেহালার শীলপাড়ার বাড়িতে বেশ কয়েকদিন আগেই পুলিশ গিয়েছিল। তাঁর ঘরেও তল্লাশি চালায় তারা। ধৃত মনোজ গুপ্তর মায়ের দাবি ছেলের কাজ নিয়ে প্রায়ই তার সঙ্গে অশান্তি হতো। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন মনোজ। মা বলেছিলেন বাবার দোকান দেখতে। তবে কোনও কথায় পাত্তা দেননি মনোজ। 


বেআইনি ভাবে জাল পাসপোর্ট তৈরির এই কারবার অনেকদিন ধরেই চলছে। হইচই শুরু হয়েছে এখন। এই চক্রের মাধ্যমে কতজন অনুপ্রবেশ করেছেন তার কোনও হিসেব নেই। এই গোটা নেটওয়ার্কের পিছনে আর কারা রয়েছে, কীভাবে সমস্ত কাজ হতো, সেটাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে এই গোটা ঘটনায় পুলিশি নজরদারিতে যে গাফিলতি রয়েছে সেই প্রশ্ন বারবার উঠে আসছে।