আবির দত্ত, কলকাতা : বাংলাদেশে অস্থির পরিস্থিতির জেরে, সীমান্তে শরণার্থীর ভিড়।  এরই মধ্যে পাসপোর্ট জালিয়াতির বিরাট পর্দাফাঁস। ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকায় ভুয়ো নথি দিয়ে আসল ভারতীয় পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছে ভিনদেশিরা ! আর তাতেই সামনে আসছে ভয়াবহ আশঙ্কা । প্রাক্তন সেনা আধিকারিকদের সন্দেহ, বাংলাদেশের অশান্ত পরিস্থিতির আবহে বাংলাদেশে জেল ভেঙে পালানো জঙ্গিরা এখন এদেশে চলে আসেনি তো ?


বাংলাদেশের জেলমুক্ত সন্ত্রাসবাদীদের ঠিকানা এখন বাংলা নয় তো ?  এই  উদ্বেগ-আশঙ্কার মধ্যেই সামনে আসছে আরও ভয়াবহ তথ্য।   ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকা খরচ করলেই, পাওয়া যাচ্ছে হাতেগরম ভারতীয় পাসপোর্ট ।  আর এই জালিয়াতি চক্রে অন্য়তম ভূমিকা নিচ্ছে পোস্ট অফিসের স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মীরা। সম্প্রতি পরপর চারজনের গ্রেফতারির পর, চাঞ্চল্য়কর পর্দাফাঁস হয়েছে এই চক্রের । আদালতে দাঁড়িয়ে সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন , ইতিমধ্য়ে ৭৩ জন বাংলাদেশের নাগরিকের হাতে ভারতের পাসপোর্ট পৌঁছে গেছে। পুলিশ সূত্রে দাবি, এই সংখ্য়াটা বেড়ে ২৫০-ও হতে পারে। 


পাসপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগে পুলিশ যে চারজনকে গ্রেফতার করেছে, তার মধ্য়ে রয়েছে বসিরহাট পোস্ট অফিসের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর তারকনাথ সেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ের ছাত্র এবং ঢাকুরিয়া পোস্ট অফিসের অস্থায়ী কর্মী দীপক মণ্ডল। বারাসাতের বাসিন্দা সমরেশ বিশ্বাস ও তাঁর ছেলে রিপন। পুলিশ সূত্রে দাবি, ধৃত দীপকই ভুয়ো তথ্য়ের ভিত্তিতে তৈরি পাসপোর্টগুলো পোস্ট অফিস থেকে সংগ্রহ করত। তারপর কুরিয়র করে থেকে সেগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় চালান করে দিত।


 তদন্তকারীদের দাবি, প্রথমে যার পাসপোর্ট বানানো হবে, তার ভুয়ো পরিচয়পত্র এবং ভুয়ো শিক্ষাগত সার্টিফিকেট তৈরি করা হত। তার ভিত্তিতে যথাযথভাবে পাসপোর্টের আবেদন করা হত। সেই তথ্য় ভেরিফিকেশনের পর, তৈরি হত পাসপোর্ট। অর্থাৎ সব নথি ভুয়ো। তার ভিত্তিতে তৈরি হল আসল ভারতীয় পাসপোর্ট। তারপর সেই পাসপোর্ট ডেলিভারির জন্য় পৌঁছোত সংশ্লিষ্ট পোস্ট অফিসে। পুলিশ সূত্রে দাবি, পোস্ট অফিসেই শুরু হত জালিয়াতির ফাইনাল এপিসোড। কারসাজি করে পাসপোর্টের খামের গায়ে সাঁটা হত ভুয়ো ঠিকানা, যার কোনও অস্তিত্ব নেই। ফলে শেষ অবধি ঠিকানা ডেলিভারি না হয়ে সেই খাম ফিরে আসত পোস্ট অফিসে। পোস্ট অফিসের যে কর্মীরা এই জালিয়াতি চক্রের অংশ, তারা এই খাম নিয়ে নিত। তারপর ২-৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তা পৌঁছে দিত নির্দিষ্ট লোকের হাতে। 


বাংলাদেশ সরকারই জানাচ্ছে, যে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের মধ্যে অন্তত চুয়াত্তর জন এখনও ধরা পড়েনি। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, পশ্চিমবঙ্গে তৈরি এইসব জাল পাসপোর্ট জঙ্গিদের হাতে পৌঁচ্ছে যায়নি তো? আশঙ্কা বাড়ছে।  


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।