পার্থপ্রতিম ঘোষ, আবির দত্ত ও সুকান্ত মুখোপাধ্য়ায়, কলকাতা: মাথা পরিষ্কার করে কামানো, পরনে সাদা গেঞ্জি। সংবাদমাধ্যমের বুমের সামনে শুধু একটাই কথা বলতে পারছেন, 'বাংলার কোনও মা বাবাকে যেন সন্তানের এমন দিন দেখতে না হয়। কোনও বাবা-মাকে যেন নিজের হাতে সন্তানের পারলৌকিক ক্রিয়া করতে না হয়।' যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (JU Student Death) প্রথম বর্ষের পড়ুয়া, ছেলেকে হারিয়ে দৃশ্যতই বিধ্বস্ত প্রৌঢ় (Father Of Deceased Student)। বাঁধ মানছে না সন্তান হারানোর শোক।
আর যা...
বিহ্বলতা সত্ত্বেও একটি বিষয় বলতে ভোলেননি তিনি। তাঁর কথায়, 'দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই। তদন্ত যেন ঠিকপথে এগোয়।' যাদবপুরের পড়ুয়ার মৃত্যুর বিচার চেয়ে এদিন উত্তাল হয়েছে শহর। দিকে দিকে একাধিক মিছিল হয়েছে। একদিকে তৃণমূলপন্থী শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মচারী, পড়ুয়ারা মিছিল করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। একই সঙ্গে অরবিন্দ ভবনের সামনে তৃণমূল বিরোধী স্লোগান দেয় ছাত্র সংগঠন আইসা। সেই অনুষ্ঠান ঘিরে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়। অন্য দিকে আবার কলেজ স্ট্রিট অবরোধ করেন এসএফআইয়ের সদস্য়রা। পার্ক সার্কাসে যাদবপুরে পড়ুয়ামৃত্যুর প্রতিবাদে পথে নেমেছেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও। সব মিলিয়ে দিকে দিকে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ।
রাজনৈতিক তরজা...
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় সিপিএমকে আক্রমণ করেছেন। এদিন তিনি বলেন 'এরা মার্কসবাদী, কখনও বিজেপির সঙ্গে, কখনও কংগ্রেসের সঙ্গে ঘর করে। এরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা লাগাতে দেয় না।' তৃণমূলনেত্রীর বক্তব্য, 'নিহত ছাত্রের বাবা আমার কাছে বিচার চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, অত্যাচার করে ছেলেটাকে উপর থেকে ছুড়ে ফেলে হয়েছে। যাদবপুর এখন আতঙ্কপুর।' সঙ্গে সংযোজন, 'যাদবপুরে পড়াশোনা ভাল হতে পারে, কিন্তু পড়াশোনায় ভাল হলেই মানুষ হয় না। এই জন্যই আমি যাদবপুরে যেতে চাই না।' পাল্টা প্রশ্ন এসেছে বিজেপি শিবির থেকেও। রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, বিশ্ববিদ্যালয়কে Ragging-মুক্ত করতে কী করেছে তৃণমূল সরকার? তার আগে, বাম সরকারেরই বা ভূমিকা কী? প্রতিবাদ-টানাপড়েনের মধ্যে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে এদিন।
শোনা যাচ্ছে, সিনিয়রদের সঙ্গে জুনিয়রদের 'আলাপ-পর্বে'র গোটাটাই ভিডিও আকারে তুলে রাখা হত। নিহত প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার ক্ষেত্রেও সম্ভবত তেমনটাই হয়েছিল। এতেই শেষ নয়। পুলিশ সূত্রে খবর, মেন হস্টেলের রাঁধুনি তাঁর বয়ানে জানিয়েছেন, সিনিয়ররা জুনিয়রদের উপর নানাভাবে অত্য়াচার করত। সিনিয়রদের কথা না শুনলে, বারান্দার সরু রেলিং-এর উপর হাঁটানো হত জুনিয়রদের।
প্রশ্ন হল, তবে কি প্রথম বর্ষের মৃত পড়ুয়ার ক্ষেত্রেও তেমনটাই করা হয়েছিল? প্রশ্ন অনেক। এখনও পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আরও কাউকে কি আড়াল করার চেষ্টা চলছে? জল্পনা তৈরি হয়েছে আগেই।
সব ছাপিয়ে যাচ্ছে সন্তানহারানো বাবা-মার হাহাকার। ছেলেকে খুইয়ে এখন শুধু ন্যায়বিচারের আশায় বেঁচে রয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন:এবার ক্রিকেটেও লাল কার্ড! অভিনব নিয়ম চালু করছে সিপিএল কৃর্তপক্ষ