কলকাতা: ঘুষের বিনিময়ে সংসদে আদানিদের নিয়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ উঠলেও, মহুয়া মৈত্রের (Mahua Moitra) পাশে আগাগোড়া দেখা গিয়েছে তৃণমূলকে। সেই আবহে এবিপি আনন্দে বিস্ফোরক দাবি করলেন প্রয়াত সাংসদ তথা অভিনেতা তাপস পালের (Tapas Paul) পরিবার।  ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, মলয় ঘটকের নাম করে একের পর এক অভিযোগ সামনে এল। এ ব্যাপারে ফিরহাদের প্রতিক্রিয়া মিললেও, কোনও মন্তব্য করতে চাননি অরূপ, মলয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কথাও উঠে এল তাঁদের মুখে।


কৃষ্ণনগরের সাংসদ পদ থেকে সম্প্রতি বহিষ্কৃত হয়েছেন মহুয়া। গোটা বিতর্কে তাঁর পাশেই থাকতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। সেই কৃষ্ণনগরেরই সাংসদ ছিলেন তাপস। তাপসের স্ত্রী নন্দিনী পাল (Nandini Paul) এবং কন্যা সোহিনী পাল (Sohini Paul) মুখ খুলেছেন এবিপি আনন্দে। তাঁদের গলায় অভিমানের সুরই ধরা পড়েছে। এবিপি আনন্দে সোহিনী বলেন, "বাবা জামিন পাওয়ার পর আমরা মলয় ঘটকের অফিসে গিয়েছিলাম। মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় বলেছিলেন মলয় সব দেখে নেবেন। চিন্তা করতে হবে না। কিন্তু মলয় ঘটকের অফিসে গিয়ে অপেক্ষার পর শুনতে পাই যে উনি বলছেন, 'বল, আমি নেই'। তখন বাবার মুখটা আমি ভুলতে পারব না।"


তাপসের মৃত্যু নিয়ে সোহিনী বলেন, "মুম্বই থেকে বাবার দেহ নিয়ে কলকাতায় আসি। অরূপ বিশ্বাস আমাদের সঙ্গে ছিলেন। পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। শেষকৃত্যের পর পারলৌকিক ক্রিয়ার কার্ড নিয়ে গেলে, অরূপ বিশ্বাস সামনে এসে তা নেননি। অরূপ বিশ্বাস আমার মায়ের ফোন নম্বর ব্লক করে দেন। এই ভণ্ডামি কেন?"


আরও পড়ুন: North 24 Parganas: ২ বিজেপি কর্মীকে মারধরে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা, পাল্টা গাছে বাঁধার 'হুমকি' বিজেপি নেতার


তাপসের স্ত্রী নন্দিনী বলেন, "১ কোটি টাকার বেল বন্ডে জামিন পেয়েছিলেন তাপস পাল। দিদি আমাকে বলেছিলেন মলয়কে সব বলা আছে। টাকা পয়সা ও সবকিছু দেখে নেবে চিন্তা নেই। দলনেত্রীর আশ্বাসে শান্তি পেয়েছিলাম। ১  কোটি টাকার বেল বন্ড অনেক বড় বিষয়। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মলয় ঘটককে ক্রমাগত ফোন করলেও সেসময় কেউ ফোন ধরেননি। রাতের দিকে মলয় ঘটক ফোন ধরেন। মলয় দাকে জিজ্ঞাসা করি 'কী করব, দলনেত্রী তো বলে গিয়েছেন!'  উনি বলেছিলেন, চিন্তার কিছু নেই টাকা রেডি আছে।  লোক টাকা নিয়ে রাতের ট্রেনে উঠে যাবে, সকালে পৌঁছে যাবে। সেই সকাল আজও আসেনি। ভূবনেশ্বরে স্থানীয় লোকেরা আমাকে সাহায্য করেন। তাপসকে বাড়িতে এনে, এফডি ভেঙে সেই টাকা আমি ফিরিয়ে দিই। তাপস পালকে যারা অভিনেতা বানিয়েছেন, আমি তাদের কাছে গিয়ে ন্যায়বিচার চাইব। ১ কোটি টাকা সিবিআইয়ের কাছে আটকে আছে, ওটা ফেরত চাই। ওই টাকাটাই আমার সম্বল, আমার স্বামীর উপার্জনের টাকা।"


তাপস মারা যাওয়ার পরও মমতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি বলে জানান নন্দিনী। তাঁর বক্তব্য, "জানি না তাপসের সঙ্গে কেন এমন খারাপ ব্যবহার করা হল। বাবা মারা যাওয়ার পর দিদির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। নবান্নে তিন বার চিঠি দিয়েছি। ডেরেক ও'ব্রায়েন, দোলা সেন, কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলাম।  কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে গিয়ে চিঠি দিয়ে বলেছিলাম দিদিকে দিতে। কোনও প্রতিক্রিয়া পাইনি।"


নন্দিনীর দাবি, সামনে ভাল ব্যবহার করলেও, তাপস দ্বিতীয় বার বিধায়কের টিকিট পাওয়ার পর উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন ফিরহাদ। শেষের দিকে ফিরহাদই তাপসের 'মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে' বলে মন্তব্য করেছিলেন বলেও দাবি করেছেন নন্দিনী। সোহিনীর কথায়, "আমি বসে আছি। আমার সামনেই বাবা পাগল হয়ে গিয়েছে বলা হয়। বাবাকে পাগল বলায় খুব হতাশ হই। আমার বাবা পাগল হননি। ২০১১ থেকে চিঠি লিখেছে বাবা। একটিরও উত্তর পায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা কোনও চিঠির উত্তর পায়নি বাবা।"


তাপসের পরিবারের এই মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ফিরহাদ। তাঁর দাবি, তাপসের পরিবাররে সঙ্গে পরিচয় রয়েছে তাঁর। তাপসের অকালমৃত্যু দুঃখজনক। পরিবারের মনে অভিমান জমে রয়েছে। দলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের মতে, তাপসের পরিবারের প্রতি সহমর্মী মমতা। তাপসকে ভালবাসতেন দলনেত্রী।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।