কলকাতা: মূল্যবৃদ্ধি (Price Hike), মুদ্রাস্ফীতির (Inflation) আঁচে যখন নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের, জ্বালানির শুল্ক (Excise Duty On Petrol Diesel) কমিয়ে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা কেন্দ্রের। শনিবার সন্ধেয় প্রতি লিটার পেট্রোলে ৮ টাকা এবং প্রতি লিটার ডিজেলে ৬ টাকা করে শুল্ক কমানোর ঘোষণা করেছে তারা। সাধারণ মানুষের সুরাহার জন্য প্রধানমন্ত্রীর (Narendra Modi) নির্দেশেই এমন পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন (Nirmala Sitharaman)। কিন্তু তা নিয়ে বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে কেন্দ্র। প্রথমে ৩০-৪০ টাকা শুল্ক বাড়িয়ে, পরে ৭-৮ টাকা ছাড় দিয়ে কেন্দ্র আসলে সাধারণ মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের। 


জ্বালানির উপর থেকে শুল্ক কমানোর ঘোষণা


এ দিন নির্মলার ঘোষণার পরই টুইটারে কেন্দ্রকে একহাত নেন কংগ্রেস (Congress) মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা (Randeep Surjewala)। তিনি লেখেন, ''কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী আজ পেট্রোলের দাম ১০৫ টাকা ৪১ পয়সা। আপনি বলছেন, প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম সাড়ে ৯ টাকা কমবে। আজ থেকে ৬০ দিন আগে অৰ্থাৎ ২০২২-এর ২১ মার্চ, প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ছিল ৯৫ টাকা ৪১ পয়সা। এই ৬০ দিনে পেট্রোলের দাম প্রতি লিটারে ১০ টাকা বাড়িয়েছেন। আর এখন প্রতি লিটার পেট্রোলে সাড়ে ৯ টাকা কমিয়ে দিচ্ছেন! সাধারণ মানুষকে বোকা বানানো বন্ধ করুন।"



এই নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেন তৃণমূল (TMC) নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার (Jay Prakash Majumdar)। তাঁর কথায়, "কেন্দ্র গোটা দেশ থেকে করের টাকা সংগ্রহ করে। আবার রাজ্যগুলির থেকেও টাকা নেয়।  পরে কিছু টাকা ফেরতও দেয় রাজ্যগুিলকে। কিন্তু আজ তাদের ভুল পেট্রোপণ্য নীতির জন্যই এমন অবস্থা। জ্বালানির দাম বাড়া মানেি সব জিনিসের দামে প্রভাব পড়বে। আজ মুদ্রাস্ফীতি কোথায় পৌঁছেছে! সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে সরকার চলছে। সম্প্রতি দলের বৈঠকে মোদির কাছে দরবার করেন বিজেপি-র নেতা-মন্ত্রীরা। এ ভাবে চলেল ভোট পাওয়া যাবে না জানান নিশ্চয়ই। তাতেই তড়িঘড়ি মোদির নির্দেশে শুল্ক কমানো হল। এখানে রাজ্যের কোনও ভূমিকাই নেই। কেন্দ্র কখনও বলে তারা দাম নিয়ন্ত্রণ করে না। আবার ভোটের আগে জাদুবলে দাম বাড়ে না। এখন ৭-৮ টাকা কমালেও, দাম বেড়েছে কতখানি? আগে ৩০-৪০ টাকা বাড়িয়ে এখন সামান্য কমিয়ে দেখাচ্ছে।"


আরও পড়ুন: Petrol-Diesel Price: শুল্কহ্রাসের ঘোষণা কেন্দ্রের, কলকাতায় পেট্রোল-ডিজেলের নয়া দাম কত, জেনে নিন


নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল বলে মেনে নিলেও, জয়প্রকাশের মতো কেন্দ্রীয় নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএম-এর (CPM) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও (Sujan Chakraborty)। তাঁর কথায়, প্রাথমিক ভাবে নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভালই। সামান্য হলেও, দাম কমায় কিছুটা সুরাহা হবে। কিন্তু সেটা অতি সামান্যই। কারণ গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর পেট্রোল-ডিজেলের উপর শুল্কের হার ৩০-৪০ টাকা বেড়েছে। তার উপর সেস-এর বিষয়টি পুরোপুরি ওদের হাতে। এমন করে রেখেছে যে পুরোটাই কেন্দ্রের প্রাপ্য। রাজ্যের কিছু নেই। তাই ৭-৮ টাকা দাম কমানো তেমন কিছু নয়।"


সম্প্রতি বাংলা-সহ অ-বিজেপি রাজ্যগুলিকে জ্বালানির উপর শুল্ক কমানোর আর্জি জানান নরেন্দ্র মোদি। তাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্যরা। করবাবদ সিংহভাগ টাকা ঘরে তুলে কয়েক লক্ষ টাকা আয় করার পর ভুল পেট্রোপণ্য নীতির দায় কেন্দ্র রাজ্যগুলির উপর চাপাতে চাইছেন বলে অভিযোগ করেন। কেন্দ্র প্রাপ্য বকেয়া মেটানো না পর্যন্ত রাজ্যের পক্ষে তা সম্ভব নয় বলেও জানিয়ে দেন। এ দিন ফের রাজ্যগুলিকে শুল্ক কমানোর বিষয়টি ভাবনা-চিন্তা করতে বলেছেন নির্মলা। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্র শুল্ক কম করায় রাজ্যের প্রাপ্য ২৫ শতাংশ থেকে আপনাআপনিই লিটারে ২ টাকা করে বাদ যাচ্ছে। তার পরেও বাড়তি ছাড়া দেওয়া যায় কিনা, তা রাজ্যগুলিকেই ভাবতে হবে।



রাজনৈতিক টানাপোড়েন


যদিও বিজেপি-র (BJP) রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar)এ নিয়ে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, "কেন্দ্র এই নিয়ে দু'বার দাম কমাল। আগে পেট্রোলের দাম লিটারে ৬ টাকা এবং ডিজেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমিয়েছিল। এই রাজ্যের সরকার নির্লজ্জ, বেহায়া, সাধারণ মানুষের বিরোধী। তাদের কাছ থেকে কিছু আশা করা যায় না। ৯৭ হাজার টাকা বকেয়ার গল্প শুনিয়ে আর কত দিন বোকা বানাবেন? অশোক লাহিড়ি আগেই বেলুন ফাটিয়ে দিয়েছেন। এমন কোনও টাকা পাওনা নেই। স্বীকার করুন, রাজ্যটিকে দেউলিয়া করে দিয়েছেন আপনারা। তাই দাম কমানোর সাধ্য নেই।"