সঞ্চয়ন মিত্র, সৌমিত্র রায় এবং রাজীব চৌধুরী, কলকাতা: যে সব বহুতল হচ্ছে, তার দশ শতাংশই বেআইনি নির্মাণ, আর নব্বই শতাংশ প্রোমোটারই চোর-ডাকাত-পকেটমার। গার্ডেনরিচকাণ্ডের পর পুরসভার ভূমিকা নিয়ে যখন নানামহলে সমালোচনার ঝড় বইছে, তখন এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন, গার্ডেনরিচের তৃণমূলের বরো চেয়ারম্যান, রঞ্জিত শীল। 


কলকাতা পুরসভার ১৫ নম্বর বরো তৃণমূল নেতা ও চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীল বলেন, 'দেখুন অনেক বাড়ি আপনার কিছুটা ফল্ট আছে। আর যারা প্রমোটিং করে, আপনাকে বলেছি, একশোটা যদি প্রোমোটার থাকে, তার মধ্যে ৯০টাই হল চোর, পকেটমার, ডাকাত। এরাই হল প্রোমোটার।' 


কলকাতা পুরসভার, ১৫ নম্বর বরো যার অন্তর্গত এই ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ড। রবিবার রাতে কলকাতা পুরসভার এই বরোরই, এই ওয়ার্ডেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে নির্মীয়মাণ বহুতল। আর এরপর পুরসভার ভূমিকা নিয়ে যখন সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইছে, তখন বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন, খোদ এই বরোরই চেয়ারম্যান।


তাঁর কথায়, 'হয়তো ফোর, ফাইভ, সিক্স মানে সে  হয়তো জি প্লাস ফোর নিয়েছে। সে তখন ফাইভ, সিক্স চালিয়ে দিচ্ছে। ভাঙছি তো। রেগুলারাইজ করার ব্যাপার থাকে কোনটা? ধরে নিন, একটা পাঁচতলা বাড়ি হলে, হয়তো অনেক সময় ৭ ফুট, ৮ ফুট, ১০ ফুট, এরকম  পরিকল্পনা অনুযায়ী তার জায়গা অনুযায়ী ছাড়ছোড় থাকে। সেইটা যখন ছাড় ছোড় থাকছে না, তার অনুযায়ী রেগুলারাইজ হয়। কিন্তু, আপনি টোটালি একটা ফ্লোর অবৈধ করে দিলেন, সেই ক্ষেত্রে  রেগুলারাইজ হওয়াটা খুবই অসম্ভব ব্যাপার।'  


আরও পড়ুন, ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার আরও এক দেহ, গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে মৃত বেড়ে ১০


এদিকে এ প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, 'প্রোমোটারিরাজ, মাফিয়ারাজ, জমি মাফিয়ারাজ সারা বাংলাকে গ্রাস করেছে। তার পরিণাম রমজানের মাসে মৃত্যুমিছিল কলকাতার বুকে গার্ডেনরিচে। সকলের অজান্তে এত বড় বড় বিল্ডিং উঠে যাচ্ছে, এ বলছে দেখিনি, ও বলছে দেখিনি, ও বলছে শুনিনি। তাহলে কী চলছে রাজ্য়ে? গোটা কলকাতাজুড়ে এরকমভাবে বেআইনি নির্মাণের জন্য কত বাড়ি, কত মৃত্যু, কত বাড়ি ভাঙবে, কত মৃত্যু অপেক্ষা করছে, আমাদের জানা নেই। 


খোদ বরো চেয়ারম্যানেরই অসহায় স্বীকারোক্তি, কেউ না কি কথাই কানে তোলে না? রঞ্জিত শীলের কথায়, 'কম করে ৫০ বার বলেছি তোদের বিল্ডিং থাকবে না। ভেঙে পড়ে যাবে। কে কার কথা শোনে? বলা মানে সে আবার নেগেটিভটা ভাবে।' 


সবমিলিয়ে প্রশ্ন একটাই, দিনের পর দিন চোখের সামনে এই বেআইনি কাজকর্ম চললেও, কার নির্দেশে সব দেখেও, না দেখার ভান চলছে?