রাজীব চৌধুরী ও সোমনাথ মিত্র, মুর্শিদাবাদ: হুগলির খানাকুল থেকে মুর্শিদাবাদের রাধাকান্তপুর। গ্রাম থেকে গার্ডেনরিচের (Garden Reach Building Collapsed) অভিশপ্ত বহুতলে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে খোয়াতে হয়েছে প্রাণ। চোখের জলে অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির দাবি তুলছে নিহতদের পরিবারগুলি।   


সপ্তাহ তিনেক আগে হুগলির খানাকুল থেকে কলকাতার গার্ডেনরিচের বহুতলে রাজমিস্ত্রির হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন আবদুল্লা। কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো, রবিবার রাতদুপুরে পরিবারের কাছে খবর আসে, ধ্বংসাবশেষের তলায় চাপা প়ড়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।                                                                                                    


নিহতের প্রতিবেশি শেখ আজিজুল বলেন, 'খুব গরিব, মাটির বাড়ি। রাজমিস্ত্রির কাজে যায়, রাজমিস্ত্রির কাজে গিয়ে, হঠাৎ কলকাতায় গার্ডেনরিচে একটা বাড়িতে কাজে ছিল।' নিহতের দিদিমা মাসুদা বেগম বলেন, 'যা গেল তো আমারই গেল, আমার কোল খালি হয়ে গেল।' 


প্রায় একই ছবি, হুগলির খানাকুল থেকে ২১৫ কিমি দূরের মুর্শিদাবাদের রাধাকান্তপুরের গ্রামে। গার্ডেনরিচের বহুতলে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে এসে প্রাণ খোয়াতে হয়েছে এই গ্রামেরই বাসিন্দা নাসিমউদ্দিন শেখকে। স্বামীকে হারিয়ে শোকে পাথর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ভর্তি করা হয়েছে মুর্শিদাবাদের  লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে।


নাসিমুদ্দিনের অসহায় বাবা বলছেন, ছেলের দেহ কলকাতা থেকে গ্রামে ফেরাতে টাকা ধার করতে হয়েছে তাঁকে। বহুতল বিপর্যয়ে নিহতের বাবা আঞ্জিল শেখ বলেন, '১৪ হাজার টাকা ধার করে নিয়ে এসেছি আমার ছেলেকে। পোস্টমর্টেম ঘরে নিয়েছে ডাক্তারখানায় নিয়েছে ১০০, আরেক জায়গায় নিয়েছে ১০০, এরকম করে নিয়েছে। একটাকাও পাইনি আমি ক্ষতিপূরণ।' 


আরও পড়ুন, 'নব্বই শতাংশ প্রোমোটারই চোর-ডাকাত-পকেটমার', গার্ডেনরিচকাণ্ডে বিস্ফোরক মন্তব্য TMC'র বরো চেয়ারম্যানের


বহুতল বিপর্যয়ে নিহতের মা নাসিরা বিবি বলেন, 'শাস্তি তো চাইবই, ওই বিল্ডিংয়ের জন্য আমার ছেলেটা মারা গেল। আমার স্বামী তো গরিব মানুষ। আমার স্বামী কীকরে ৪-৪টে বাচ্চা নিয়ে, ওরকম যুবক বউ নিয়ে আমাকে তো সংসার ম্যানেজ করতে হবে।' 


আর কতদিন এভাবে রুজিরুটির জন্য গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে প্রাণ খোয়াতে হবে? দায় কি কেউ কোনওদিন নেবে?