কলকাতা : দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স (Zero Tolerance)। একের পর এক নির্দেশিকায় তা প্রমাণও করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Gangopadhyay)। আর এই নির্দেশিকা দিতে গিয়ে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে চলেছে চর্চা। কিন্তু, সত্যিই কি তাঁর কোনও রাজনৈতিক এজেন্ডা আছে ? 'ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন'-এর অনুষ্ঠানে তা স্পষ্ট করে দিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।  


"আপনার কোনও রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা নেই এটা মানবেন ?" এই প্রশ্নের উত্তরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "আজই আমি তার উত্তর দেব না।" কিন্তু একজন বিচারপতির কোনও রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকলে তা তো মারাত্মক হতে পারে। প্রভাব পড়তে পারে বিচারে। বিচারপতি হিসেবে রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকলে ন্যায়বিচার হবে না। এপ্রশ্নের জবাবে বিচারপতি বলছেন, "কোনও দলীয় রাজনীতি নাও হতে পারে। মতাদর্শ। টুল নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলতে পারি যে এর বিরুদ্ধে একজোট হও। প্রয়োজন হলে রাস্তায় বসে ১০৩ দিন অনশন করে মরে যাব। একটা চাপ তৈরি হবে। বিভিন্ন জায়গায় দুর্নীতি হয়েছে। আমার একমাত্র এজেন্ডা 'দুর্নীতি'। আমি দুর্নীতিকেই দেখেছি ভারতের অভিশাপ হিসেবে। এটা কমাতে পারলে(শেষ তো করা যাবে না), একটু চাপ যদি তৈরি করা যায়, তাহলে কাজ হয়তো হবে ।"


আরও পড়ুন ; অন্তত একটা-দুটো রায় দিয়ে যেতে চাই, যা মানুষ মনে রাখবে, সোজাসাপ্টা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়


'দুর্নীতি দেখলে রুখে দাঁড়াবই'-


তবে, এই প্রথমবার নয়। এর আগেও তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। 'দুর্নীতি দেখলে রুখে দাঁড়াবই', হাইকোর্টেই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। 


সম্প্রতি ডিভিশন বেঞ্চের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এরপর তাঁর ১৭ নম্বর এজলাসের বাইরে জটলা করতে দেখা যায় একদল আইনজীবীকে। অভিযোগ ওঠে, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন তৃণমূলের আইনজীবী সেলের একাংশ। সেই সময় এজলাসে ঢোকার চেষ্টা করেন কয়েকজন বর্ষীয়ান আইনজীবী। দু’পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি বাধে। এজলাসের বাইরে তুমুল হৈ হট্টগোল শুরু হয়।


এরপর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এজলাসে এসে বলেন, কেউ যদি আমার এজলাসে শুনানিতে অংশ নিতে না চান, তাহলে আমার কোনও অসুবিধা নেই। যাঁদের এখানে মামলা নেই, তাঁরা দয়া করে এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যান। এজলাসের ভিতরে থাকা আইনজীবীরা বেরনোর সময় অবস্থানরত আইনজীবীদের মারতে যান। আইনজীবীরা দৌড়ে গিয়ে প্রধান বিচারপতির এজলাসে আশ্রয় নেন। তাঁদের কাছে সব শুনে প্রধান বিচারপতি এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যান। তারপর নিজের চেম্বারে বর্ষীয়ান আইনজীবীদের ডেকে পাঠান। তুমুল হৈ হট্টগোলের পর, মামলার শুনানি শুরু হলে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এক আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, আপনারা রাজনীতি করছেন করুন, আমি করছি না। আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আদালতে বিচার করছি। কিছুদিন আগে অশোক দেবের সঙ্গে দেখা হল। তাঁকেও বলেছি, আপনি আমার বিরুদ্ধে যা বলছেন, সেটা মন থেকে মেনে নিতে পারছেন তো ? আমি দুর্নীতি দেখলে রুখে দাঁড়াবই। মাথায় বন্দুক ঠেকালেও থামব না। সব আমলেই দুর্নীতি হয়। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে আমাকে সাহায্য করুন।