কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা: রাজ্য সরকার ও রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে রাজপাল জগদীপ ধনকড়ের বিরামহীন সংঘাতে নতুন মাত্রা। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে তাঁরই দলের সাংসদকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠানোর চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর দাবি, ‘উনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে যা বলছেন, সে সবই অসত্য। আমি ওঁকে বারবার বলেছি, আবেদন করেছি, যাতে বিরত থাকেন। উনি তা না করে, আমার কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে নিন্দা করে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠাচ্ছেন।’
হাওড়া পুরসভা বিল থেকে শুরু করে জিটিএ-র অডিট রিপোর্ট, একের পর এক ইস্যুতে যখন রাজ্য আর রাজভবনের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে, তখন বুধবার নিজের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট দেখিয়ে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেন দমদমের তৃণমূল সাংসদ। তাঁর অভিযোগ, ‘মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করছেন না, এসব লিখে আমাকে হোয়াটসঅ্যাপ করছেন। আমি জবাব দিতে চাই না। জবাব দিইনি। কারণ দিলেই প্রকাশ করে দেবে। থামছেন না একদম। বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। আমি কিন্তু প্রভাবিত হব না।’
পাল্টা তৃণমূলকে আক্রমণ করে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘রাজ্যপালের পদ অত্যন্ত সম্মানীয় এবং সৌগত বাবু অত্যন্ত সিনিয়র পলিটিশিয়ান। সিনিয়র পলিটিশিয়ানের মুখে এই ধরনের মন্তব্য আমার মনে হয় ঠিক নয়। তাঁকে যদি কেউ ব্যক্তিগতভাবে কোনও মেসেজ পাঠিয়ে থাকেন, সেই মেসেজ উনি বাজারে ছেড়ে দিচ্ছেন আমার মনে হয় ওঁর মতো একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের কাছ থেকে এই ধরনের কাজ করা অনুচিত।’
সুনির্দিষ্টভাবে সৌগতর এই অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজভবনের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। কিন্তু বুধবার সকালেই রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী-কে নিশানা করেন অন্য একটি ইস্যুতে। ট্যুইটারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের ভিডিও পোস্ট করেন রাজ্যপাল। এর সঙ্গে তিনি লেখেন, ‘১৬ ডিসেম্বর গোয়ায় রাজনৈতিক সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজভবনে এক রাজা বসে আছেন। এই মন্তব্য অত্যন্ত নিন্দাজনক এবং রাজ্যপালের পক্ষে অবমাননাকর। একজন মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন ভাষা আশা করা যায় না। গণতন্ত্রের উন্নতির জন্য রাজ্যের প্রশাসনিক এবং সাংবিধানিক প্রধানের মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি। বাংলায় তা হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীর উচিত, সংবিধান ও আইন মেনে চলা।’
পাল্টা রাজ্যপালকে আক্রমণ করে সৌগত বলেছেন, ‘উনি প্রতিদিন ট্যুইট করছেন, সেটা অবমাননাকর। কেন্দ্রের মনোনীত ক্রীড়নক রাজ্যপাল।’
বিজেপি রাজ্য সভাপতি আবার রাজ্যপালের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘রাজ্যপালের পদটি সাংবিধানিক পদ এবং সেই পদে থাকাকালীন তার যে সম্মান আছে আমার মনে হয় মুখ্যমন্ত্রী বা অন্যান্য মন্ত্রীদের পক্ষ এই ধরনের কথা বলার শোভনীয় নয়।’
রাজ্য-রাজভবন সংঘাত পর্বে আগামী দিনে কোন দিকে এগোয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।