ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, আবির দত্ত, সমীরণ পাল, কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা: রামনবমীতে অশান্তির ছবি দেখেছিল বাংলা। একাধিক জায়গায় দেখা গিয়েছিল হিংসা। তারপরেই হনুমানজয়ন্তী, আগেভাগে সতর্ক থাকতে রাস্তায় নামানো হয়েছিল আধা সেনা। মাত্র তিন কোম্পানি আধাসেনা রাস্তায় নামতেই উধাও হিংসার ছবি। রাজ্যে হনুমানজয়ন্তী কাটল কোনও অশান্তির ঘটনা ছাড়াই। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কলকাতা, বরানগর, টিটাগড়, মগরায় টহল দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। পরে কোথাও কোথায় তাঁদের নিরাপত্তাতেই বেরতে দেখা যায় হনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রা।
কালাকার স্ট্রিটে, নিমতলা ঘাট স্ট্রিটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুটমার্চ দেখা যায়। টিটাগড়ে টহলদারি দিতে দেখা যায়। বরানগর ও মগরাতেও রুটমার্চের ছবি দেখা গিয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় বাহিনীর ভারি বুটের শব্দ। কলকাতা থেকে আশপাশের জেলায় সকাল থেকে টহল চলেছে আধা সেনার। আর তার জন্য ফলও মিলেছে হাতেনাতে।
এর আগে ৩০ মার্চ শিবপুরে অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্র হাতে মিছিল দেখা গিয়েছে। ওই একই দিনে ডালখোলাতেও অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। তারপরে ২ এপ্রিল রিষড়া। পরপর ২ দিন অশান্তির কারণে তেতে ছিল রিষড়া। রামনবমীকে কেন্দ্র করে যেখানে, কার্যত ৫ দিন ধরে অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল, সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামতেই, শান্তিতেই মিটল হনুমান জয়ন্তী।
রাস্তায় বাহিনী:
রামনবমীতে লাগাতার অশান্তির পর, হনুমান জয়ন্তীর জন্য়, পুলিশে ভরসা না রেখে, রাজ্য সরকারকে দিল্লির কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই মতো কলকাতা থেকে জেলা, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গায় রুটমার্চ করতে দেখা যায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। হাইকোর্টের নির্দেশে পোস্তা থানা এলাকায় এসেছে, দুই সেকশন কেন্দ্রীয় বাহিনী। কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) দীনেশ কুমার বলেছেন, 'সেন্ট্রাল ফোর্স রুটমার্চ করছে, যাতে কনফিডেন্ট ডেভলপ করে।'
কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ১ কোম্পানির কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ভাগ করে, পোস্তা থানা এলাকায় ২ সেকশন, চারু মার্কেট থানা, হেস্টিংস থানা, একবালপুর, গার্ডেনরিচ, জোড়াবাগান ও আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকায় ১ সেকশন করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। রামনবমী উপলক্ষে কলকাতায় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও, অশান্তির আগুন ছড়িয়েছিল হাওড়া-হুগলিতে। তাই হনুমান জয়ন্তীতে যাতে শান্তি বজায় থাকে, তাই জেলার বিভিন্ন প্রান্তেও মোতায়েন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। যেমন উত্তর চব্বিশ পরগনার ব্যারাকপুর কমিশনারেটে ১ কোম্পানির কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ব্যারাকপুর, টিটাগড়, বরানগরের বিভিন্ন জায়গায় রুটমার্চ করে তারা। ব্যারাকপুরে এক কোম্পানি সিআরপিএফ এসেছে, সেটাকে তিনটে প্লাটুনে ভাগ করা হয়েছে, একটি বরানগর, দমদম, নাগের বাজারের, একটি প্লাটুন টিটাগড়ের জন্য। উত্তর ২৪ পরগনার পাশাপাশি হুগলির মগরাতেও রুটমার্চ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। পরে হুগলির বাঁশবেড়িয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তাতেই হনুমানজয়ন্তীর শোভাযাত্রা হয়।
এই আবহে পঞ্চায়েত ভোটও কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে করার দাবি তুলেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় বাহিনী নামতেই যখন সমস্ত অশান্তি উধাও, তখন রাজ্য় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে আরও বেশি করে সরব হয়েছে বিরোধীরা।