অর্ণব মুখোপাধ্যায়, অরিত্রিক ভট্টাচার্য ও সন্দীপ সরকার, কলকাতা: হরিদেবপুরে (Haridev) কার গাফিলতিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ছাত্রের মৃত্যু হল? পুরসভা, সিইএসসি (CESC) , ও বিএসএনএল (BSNL) প্রত্যেকেই অন্যের কোর্টে বল পাঠাতে ব্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে, ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) নির্দেশ দিয়েছেন, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখবে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর। সহায়তা করবে CESC, কলকাতা পুলিশ ও কলকাতা পুরসভা। 


হরিদেবপুরে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রের। জমা জল পেরিয়ে যাওয়ার সময়, রাস্তার পাশের লাইট পোস্টে হাত দিতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ছাত্র! মুহূর্তে সব শেষ। খালি মায়ের কোল। কিন্তু, এই মর্মান্তির দুর্ঘটনার দায় কার? কলকাতা পুরসভার নিকাশি বিভাগের? কলকাতা পুরসভার আলো ও বিদ্যুৎ বিভাগের? সিইএসসি’র? নাকি বিএসএনএল-এর? তা নিয়ে শুরু হয়েছে দড়ি টানাটানি।


১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রত্না শূর বলেন, "বিএসএনএলের একটি পরিত্যক্ত খুঁটি, সেখানে নানা রকম কেবলের তার ইন্টারনেটের তার ছিল, ওখান লোকজনের দাবি ছিল আলোর, টেম্পোরারি ওখানে লাগানো হয়েছিল, পোস্টের যোগ নেই। বডি হলে নিউট্রাল হয়ে যায়। কদিন আগে সিইএসসি খোঁড়াখুঁড়ি করেছিল।" 


আরও পড়ুন, ফি বছর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু শহরে, প্রশাসনের হুঁশ ফিরবে কবে!


স্থানীয় কাউন্সিলর এই দাবি করলেও, কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ নিকাশি এবং মেয়র পারিষদ আলো ও বিদ্যুৎ আবার অন্য দাবি করেছেন। কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ বলেন, "হঠাৎ করে বৃষ্টি হয়েছে, সিইএসসির কারেন্ট পোস্টের সঙ্গে শর্টসার্কিট হয়ে গেছে, আমি যেটা দেখেছি, যে পোলটার উপর লাইট লাগানো আছে, ওই পোলে এই লাইট লাগানোর কথা নয়, কে বা কারা লাগিয়েছে, দেখা দরকার। আমাদের পুরসভার জেনারেল প্র্যাকটিসের মধ্যে এই ধরনের লাইন লাগানোর নিয়ম নেই।" 


কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (আলো) সন্দীপরঞ্জন বক্সী বলেন, "আমাদের ওখানে ওই সময় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয় না। আমাদের ওভাবে লাইট লাগানো হয় না। সিএসসির কাজের জন্য হতে পারে, কেউ হুক করেছিল তার জন্য হতে পারে না।" 


হরিদেবপুরের এক বাসিন্দা বলেন, "এখানে কোনও হুকিং হয় না, যখন হয়েছিল তখন আলো জ্বলছিল।" অনুমতি না নিয়েই তাদের পরিত্যক্ত পোস্টে কলকাতা পুরসভা আলো লাগিয়েছে বলে দাবি করেছে বিএসএনএল। ক্যালকাটা টেলিফোনস সিজিএম দেবাশিস সরকার বলেন, "ওই পোস্টটা আমাদের অব্যবহৃত পোস্ট, কোনও কাজে লাগছিল না। আমাদের যে লাইনগুলো থাকে ৫৪ ভোল্টের বেশি কারেন্ট থাকে না। বেশ কিছু অন্যান্য তার লাগানো আছে, আলোর ব্র্যাকেডও আছে। আমাদের কোনও অনুমতি এক্ষেত্রে নেওয়া হয়নি।" 


CESC সূত্রে আবার দাবি ওই এলাকায় তাদের সব তার মাটির নিচ দিয়ে গেছে। তাই তাদের তার লেগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, "কমিশনারকে বলেছি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে, কার দোষ ঠেলাঠেলি না করে, একটা থার্ডপার্টিকে ঠিক করতে, স্বাধীন তদন্ত করতে, পুরসভার দোষ থাকলে, ডিজিকে শোকজ, আমরা তো বলেছিলাম খোলা তার যেন না থাকে।" 


সোমবার বিকেলে পুরসভায় বৈঠকে বসেন মেয়র, কয়েকজন মেয়র পারিষদ ও পুর আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, বৈঠকে আধিকারিকরা পরস্পরের উপর চায় ঠেলাঠেলি করায়, ক্ষুব্ধ মেয়র বৈঠক ছেড়ে বেড়িয়ে যান। পরে মেয়র নির্দেশ দেন, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখবে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর। তাকে সহায়তা করবে CESC, কলকাতা পুলিশ ও কলকাতা পুরসভা। দু’দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। রিপোর্টের ভিত্তিতে করা হবে FIR।


পাশাপাশি শহরের সমস্ত বাতিস্তম্ভের অবস্থাও পরীক্ষা করে দেখা হবে। মেয়রের নির্দেশে দায়িত্ব পেয়েই এদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিক।