হরিপার্থপ্রতিম ঘোষ, অনির্বাণ বিশ্বাস, সুকান্ত দাস, কলকাতা : হরিদেবপুরে যুবক খুনের ঘটনায় নতুন মোড়। চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন নিহতের বাবা। তাহলে কি ত্রিকোণ সম্পর্কের জেরে খুন? নিহত অয়ন মণ্ডলের বাবা ভোম্বল মণ্ডলের দাবি, ' মা ও মেয়ের সঙ্গে আমার ছেলের সম্পর্ক বাবা ভালভাবে নিত না, তাই দুই ভাই মিলে খুন করেছে' । কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ-ওয়েস্ট)-এর দাবি, ভাই প্রথম আঘাত করেছে !


যুবক খুনের ঘটনায় তাঁর বান্ধবী , বান্ধবীর মা ও বান্ধবীর ভাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে অয়নের বান্ধবীর বাবাকেও। 


প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা
এদিকে হরিদেবপুরে যুবক খুনের ঘটনাতেও প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা ! বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মগরাহাটে মৃতদেহ উদ্ধার হয়। কিন্তু কলকাতা পুলিশ তা জানতে পারে শুক্রবার দুপুরে। তাহলে কি, বাগুইআটির জোড়া হত্যাকাণ্ড থেকেও শিক্ষা নেয়নি পুলিশ?  পুলিশের মধ্যেই সমন্বয়ের অভাব রয়েই গেছে?


হরিদেবপুরের যুবক খুনের ঘটনায় ঘুরেফিরে উঠছে সেই প্রশ্নটাই । বুধবার, দশমীর দিন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন অয়ন মণ্ডল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালেও তিনি না ফেরায়, প্রথমে হরিদেবপুর থানায় যান বাড়ির লোকজন।


অভিযোগ, তাঁদের বাড়ি রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকায় হওয়ায় সেই থানায় যেতে বলা হয়। সেখানে গেলে আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয় হরিদেবপুর থানায়। নিহত অয়ন মণ্ডলের বাবার দাবি, ' ১০ টার সময় এসেছিলাম, ফিরিয়ে দিয়েছে। তারপর রিজেন্ট পার্ক থেকে বলতে ডায়েরি নিয়েছে। ৫-১০ মিনিট বলেছিল। প্রথমে বলেছিল রিজেন্ট পার্ক এরিয়া, সেখানে ডায়েরি করো। তারপর রিজেন্ট পার্ক থেকে ফোন করল, ছেলেটা তোমাদের ওদিকে মিসিং হয়েছে, তোমরা ডায়েরি নিয়ে নাও। আধ ঘণ্টা বসিয়ে বলছে মেয়েটাকে ডেকে নিয়ে আসো। মেয়েটাকে নিয়ে আসলাম। তারপর বলছে ঝিলের পার দেখে আসো। তারপর পুলিশ বলছে, লোকেশন পাওয়া গেছে ফুলের দাড়ি। সেখানে ১৫-১৬ ছেলে গেল। খুঁজে এল, পেল না। পুলিশ যায়নি, বলছে তোমরা গিয়ে দেখে আসো।' 


অন্যদিকে ডায়মন্ডহারবার জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় মগরাহাটে যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ওই দিন সকাল ১০টায় দেহ পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য। দুপুর সাড়ে ১২টার সময় সমস্ত থানায়, ছবি-সহ মেসেজ পাঠানো হয় যে এক অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।  কিন্তু, শুক্রবার দুপুর ২টোর পর কলকাতা পুলিশ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। 


অন্যদিকে, দোষীদের শাস্তির দাবিতে দেহ নিয়ে বিক্ষোভের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এল অয়নের পরিবার । শেষ পর্যন্ত পুলিশি তদন্তেই আস্থা রাখল হরিদেবপুরের নিহত যুবকের পরিবার। মৃতের বান্ধবী, তার মা ও ভাইকে গ্রেফতারের পর তার বাবাকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের পর রাতে হরিদেবপুরের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় নিহত অয়নের মৃতদেহ। পুলিশের আশ্বাসে অবশেষে বিক্ষোভের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন আত্মীয়রা। মাঝরাতে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য হয় নিহত অয়ন মণ্ডলের।হরিদেবপুরের যুবক অয়ন মণ্ডল খুনে উঠছে একাধিক প্রশ্ন।