কলকাতা: হরিদেবপুরে (Haridevpur Update) অয়ন মণ্ডল (Ayan Mondal) খুনের তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সূত্রের খবর, “টার্গেট ছিল অয়ন মণ্ডলের মোবাইল ফোন। অয়নের মোবাইল ফোনে বন্দি ছিল একাধিক ঘনিষ্ঠ ছবি ও ভিডিও। ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও ও ছবি তোলাকে কেন্দ্র করেই গণ্ডগোলের সূত্রপাত। বান্ধবী ও তাঁর মায়ের সঙ্গে গণ্ডগোলের সূত্রপাত অয়নের।


হরিদেবপুরে খুনের তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য: প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান। পরিকল্পনা করেই খুন করা হয় হরিদেবপুরের অয়নকে। সূত্রের খবর, দোতলার ঘরে খুন করা হয় অয়ন মণ্ডলকে। অথচ ফরেন্সিক পরীক্ষায় এক ফোঁটা রক্তের নমুনা মেলেনি। খুনের পর শুধু দেহ পাচার নয়, প্রমাণ লোপাটে মোছা হয়েছিল ঘর, অনুমান পুলিশের। পুলিশ সূত্রে খবর, অয়ন যখন বান্ধবীর বাড়িতে যায়, তখন শুধু তাঁর মা ছিলেন। বান্ধবীর মায়ের সঙ্গে দোতলায় উঠে যান অয়ন। সেখানে অয়ন ও তাঁর বান্ধবীর মায়ের সঙ্গে একপ্রস্থ হাতাহাতি হয়। এরপরই একে বাড়িতে আসে বান্ধবী ও তাঁর বাবা, ভাই ও তাঁর বন্ধুরা। খুনের পর পরিকল্পনা করেই লোপাট করা হয় দেহ, অনুমান পুলিশের।


হরিদেবপুরকাণ্ডে ধৃতদের জেরা করে গতকালই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, অয়ন মণ্ডল খুনের ব্লু-প্রিন্ট ছিল বান্ধবীর মায়ের। মারধরে প্ররোচনা দিয়েছিলেন তিনিই। হরিদেবপুরে দশমীর রাতেই বান্ধবীর বাড়িতে মারধরের জেরে মৃত্যু হয় বছর ২১-এর এই যুবকের। খুনের পর দেহ লোপাটের নির্দেশ দেন অয়নের বান্ধবীর বাবা। কিন্তু কী করে নৃশংসভাবে খুন করা হল অয়নকে? দেহ লোপাটের ছকই বা কষা হয়েছিল কীভাবে? পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার দশমীর রাতে বান্ধবীর সঙ্গে ফোনে কথা হয় অয়নের। রাত ১১টা নাগাদ, বান্ধবীর বাড়িতে পৌঁছন অয়ন। কিন্তু সেখানে তখন তাঁর বান্ধবী ছিল না। তাঁর মাকে জিজ্ঞেস করতে, তিনি অয়নকে জানান, মেয়ে অন্য বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গেছে। পুলিশ সূত্রে দাবি, এ কথা শোনার পরই অয়নের সঙ্গে তাঁর বান্ধবীর মায়ের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। অশান্তি চলাকালীনই বাড়িতে ফেরে বান্ধবী ও তাঁর ভাই। জেরায় ধৃতদের দাবি করেছেন, উত্তেজিত অয়ন তখন চড়াও হন বান্ধবীর উপরে। সূত্রের খবর, উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে অয়নকে মারধরে প্ররোচনা দেন বান্ধবীর মা। অভিযোগ, এরপরেই ২১ বছরের অয়নের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে বান্ধবীর ভাই। যুবকের বান্ধবীও বাঁশ নিয়ে তাঁর ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। পুলিশ সূত্রে দাবি, মারধরের জেরে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে অয়ন। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।


পুলিশ সূত্রে দাবি,ধৃতরা জেরায় জানিয়েছেন, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় এসেছিলেন অয়ন। তদন্তকারীদের অনুমান, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন বলেই একের পর এক মারধরে কোনও প্রতিরোধ করতে পারেনি সে। মারধরে অয়নের মৃত্যুর পর বাড়িতে আসেন বান্ধবীর বাবা। তিনিই অয়নের মৃতদেহ লোপাটের নির্দেশ দেন। সেইমতো নিজের দুই বন্ধুকে ফোন করে ডাকে অয়নের বান্ধবীর ভাই। এরপরই শুরু হয় মৃতদেহ লোপাটের প্রক্রিয়া। রাতের অন্ধকারে পাশের একটি নির্মীয়মাণ বাড়ি থেকে খুলে আনা হয় কালো রঙের ত্রিপল। তাতেই কোনওমতে অয়নের নিথর দেহ জড়িয়ে ফেলে বান্ধবীর ভাই ও তার বন্ধুরা। এরপর শুরু হয় গাড়ির খোঁজ! অয়নের বান্ধবীর ভাই ও তাঁর দুই বন্ধু চলে যায় কুঁদঘাটে। সেখানে জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার কথা বলে একটি মিনিডোর ভাড়া করে তারা। তিনজন মিলে মৃতদেহ নিয়ে রওনা দেয় বিষ্ণুপুর থানার নেপালগঞ্জের দিকে। পুলিশ সূত্রে দাবি, একেবারে পেশাদারি কায়দায়, তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে একটি নির্জন জায়গায় জলাশয়ের মধ্যে অয়নের মোবাইল ফোন সুইচড অফ করে ফেলে দেয় তিনজনে। সেই কারণেই অয়নের মোবাইল ফোনের শেষ টাওয়ার লোকেশন নেপালগঞ্জ দেখিয়েছিল। নেপালগঞ্জ হয়ে অয়নের মৃতদেহ নিয়ে মিনিডোর এগিয়ে যায় মগরাহাট থানার মাগুরপুকুরের দিকে। সেখানে নির্জন জায়গা দেখে ফেলে দেওয়া হয় অয়ন মণ্ডলের রক্তাক্ত মৃতদেহ। পরে সেই দেহ উদ্ধার করে মগরাহাট থানার পুলিশ।


আরও পড়ুন: Haridevpur Murder: ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও ও ছবি তোলাকে কেন্দ্র করেই বান্ধবী ও তাঁর মায়ের সঙ্গে গণ্ডগোল অয়নের?