অরিত্রিক ভট্টাচার্য, কলকাতা : পুজোর ২ দিন আগে নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ভাসল কলকাতা। রাতভর তুমুল বৃষ্টিতে কলকাতা, সল্টলেক এবং লাগোয়া এলাকা বানভাসি চেহারা নিয়েছে। কোথাও কোমর সমান জল, কোথাও আবার হাঁটু পর্যন্ত। প্রচুর বাড়ির একতলায় জল ঢুকে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় পুজোর প্রস্তুতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। কোথাও ভেঙে পড়েছে নির্মীয়মাণ স্টল। কোথাও আবার বিজ্ঞাপনের গেট। এমন বৃষ্টির তোড় দেখে অনেকেই বলেছেন, এ তো মেঘ ভাঙা বৃষ্টি ! সম্প্রতি উত্তরাখণ্ড, দেহরাদুন, জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচলপ্রদেশের মেঘ ভাঙা বৃষ্টির ভয়াল রূপ দেখে আতঙ্কিত হয়েছেন সকলে ।
গত কয়েক মাসে ভয়ঙ্কর মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের । ধূলিসাৎ হয়েছে বহু জনপদ। তা বলে সমতলে মেঘভাঙা বৃষ্টি ? এমনটাও হয় না কি ? প্রশ্নটা ছিল অনেকের মনেই। অবশেষে প্রশ্নের জট ছাড়ালেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আঞ্চলিক অধিকর্তা হাবিবুর রহমান। তিনি বুঝিয়ে বললেন, প্রথমত ক্লাউডবার্স্ট পার্বত্য এলাকায় হয়। কলকাতার ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী এখানে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে নিম্নচাপের প্রভাবে একসঙ্গে প্রচুর জলীয় বাষ্প সম্মিতিত হয়ে এই বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছে। খুব কম সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টি ঘটিয়েছে। আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা জামালেন, কলকাতায় ৪-৫ ঘণ্টায় আড়াইশো থেকে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ক্লাউডবার্স্টের ক্ষেত্রে সেই পরিমাণ বৃষ্টি এক ঘণ্টায় হয়ে যায়।
মেঘ ভাঙা বৃষ্টি কী, কী বলছে ভৌগলিক সংজ্ঞা
উল্লম্ব মেঘ ভেঙে গিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে কোনও এলাকায় যখন ১০ সেন্টিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টি হয় তাকে বলে মেঘ বিস্ফোরণ বা মেঘ ভাঙা বৃষ্টি৷ এই মেঘের উচ্চতা ভূপৃষ্ঠ থেকে কখনও কখনও ১৫ কিলোমিটার পর্যন্তও হতে পারে৷ কখনও কখনও কয়েক মিনিটের মধ্যে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে৷ আচমকা এই বিপুল পরিমাণ বৃষ্টিতে নামে হড়কা বান৷ কলকাতায় এতটা বৃষ্টি হয়নি।
গত মাসেই উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী, রুদ্রপ্রয়াগ এবং চামোলি জেলায় মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ঘটে। পাহাড়ি ধসে ধ্বংসস্তূপ হয়ে যায় চামোলির মোপাটা গ্রাম। উত্তরকাশীতে প্রবল বৃষ্টি, গঙ্গোত্রী হাইওয়েতে বিরাট ধস নামে। জলের তলায় বদ্রিনাথ হাইওয়ের একাংশ ডুবে যায়। দিল্লিতে বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে যায় যমুনার জলস্তর। প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয় হিমাচল প্রদেশের মানালিও।জম্মু কাশ্মীরের কিশতোয়ারে মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে হড়পা বানেও প্রচুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।