সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: ফের হাইকোর্টের কড়া সমালোচনার মুখে রাজ্য সরকার। এবার কালিয়াগঞ্জকাণ্ডের তদন্তে রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। রাজ্য সরকারের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এবার, কি CBI তদন্তের নির্দেশ দিলে খুশি হবেন? বৃহস্পতিবার ফের এই মামলার শুনানি।
সম্প্রতি উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে। দেহ ঘিরে বিক্ষোভ হলে পুলিশের বিরুদ্ধে নাবালিকার দেহ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। তারপরেই কার্যত আগুন জ্বলে ওঠে কালিয়াগঞ্জে। পুলিশকর্মীরা সাধারণ বাসিন্দাদের ক্ষোভের শিকার হয়। তাণ্ডব চলে এলাকা। এই ঘটনায় সিট গঠন করে রাজ্যের উপরেই তদন্তভার দিয়ে আস্থা রেখেছিল হাইকোর্ট। যদিও সেই তদন্তের হাল এবং সিটকে সহযোগিতা করার প্রশ্নে দেখে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। কালিয়াগঞ্জের ঘটনায়, স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে রিপোর্টও তলব করেছেন বিচারপতি মান্থাা।
সম্প্রতি, ১৬ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে, আগুন জ্বলে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে। মৃতদেহ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে বিতর্কে জড়ায় পুলিশ। অশান্তির ঘটনায় কালিয়াগঞ্জ থানায় আগুন, ভাঙচুর, পুলিশকর্মীদের মারধরের ঘটনা ঘটে। মৃতদের টেনে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায়, উত্তাল হয় রাজ্য রাজনীতি। জনস্বার্থ মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। CBI-তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় মৃতার পরিবার। এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত হতে চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেন শুভেন্দু অধিকারী।
এরপর ১১ মে, কালিয়াগঞ্জকাণ্ডের মামলায় রাজ্য পুলিশের ভূমিকায় কার্যত অনাস্থা প্রকাশ করে, তদন্তে SIT গঠন করেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। বিচারপতি যে ৩ জনের SIT তৈরি করে দেন, তাতে রাখা হয়, CBI-এর প্রাক্তন অ্য়াডিশনাল ডিরেক্টর উপেন বিশ্বাস, রাজ্য় পুলিশের প্রাক্তন IG পঙ্কজ দত্ত এবং কলকাতা পুলিশের তৎকালীন স্পেশাল সিপি (টু) দময়ন্তী সেনকে। কিন্তু দু-দিন আগেই কলকাতা পুলিশ থেকে রাজ্য পুলিশে বদলি করে দেওয়া হয় IPS অফিসার দময়ন্তী সেনকে। কলকাতা পুলিশের স্পেশাল কমিশনার (টু) থেকে দময়ন্তী সেনকে পাঠানো হয় রাজ্য পুলিশের ADG ট্রেনিং পদে।
এরপরই বৃহস্পতিবার, কালিয়াগঞ্জ মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা বলেন, কেন SIT-কে সাহায্য করছে না পুলিশ? রাজ্য সরকার নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনছে। এরপরই, রাজ্য সরকারের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, এবার কি CBI তদন্ত দিলে খুশি হবেন? SIT যাতে কাজ করতে না পারে, সেই চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার, এমনটাও বলতে শোনা যায়।
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, 'যতগুলি সিবিআই, ইডি, এনআইএ তদন্ত হচ্ছে। সবকটা এরকম ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ হাইকোর্টে গিয়েছেন, কেস করেছেন, কোর্ট মেনে নিয়েছে। সিবিআই তদন্ত দেওয়ার পরেও সেই অফিসারদের সহযোগিতা করা হচ্ছে না। পুলিশ গুন্ডার চেয়ে বেশি অত্যাচার করছে এখানে।
তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, 'এটা সম্পূর্ণ কোর্টের বিষয়। সেখানে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা নিশ্চয়ই ছিলেন। তাঁরা তাঁদের বক্তব্য নিশ্চয়ই রেখেছেন। এই মুহূর্তে এই নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই।'
আগামী, বৃহস্পতিবার ফের এই মামলার শুনানি হবে কলকাতা হাইকোর্টে। ওই দিনই দময়ন্তী সেনকে পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত।
আরও পড়ুন: গরম থেকে রেহাই পেতে ঘুরে আসুন ঠান্ডা 'ট্যুরিস্ট স্পট' থেকে, রইল ৮ 'অফবিট' সন্ধান