কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: যেখানে গাড়ি কারখানা হওয়ার কথা ছিল, সেই জমিতেই এখন কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করে মাছ চাষ হচ্ছে। একসময় রাজ্যের শিল্পের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে যে সিঙ্গুরের নাম উঠে এসেছিল, সেটাই কার্যত আজ পরিণত হয়েছে শিল্পের সমাধিতে। এরইমধ্যে সম্প্রতি আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দিয়েছে, সিঙ্গুরে (Singur) কারখানা না হওয়ায় সুদ-সহ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে WBIDC-কে। যা নিয়ে রাজনীতির পারদ ক্রমশ চড়ছে।


সিঙ্গুরে আক্ষেপের সুর: চোখ ধাঁধানো আলো, দেশ-বিদেশের শিল্পপতিদের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার যখন সপ্তম বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন শুরু হল, তখন প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে হুগলির সিঙ্গুরে সূর্যাস্তের পর নেমে এসেছে অন্ধকার। অন্ধকারে কার্যত সিঙ্গুরের শিল্প সম্ভাবনরাও। অথচ বাম আমলে, এই সিঙ্গুরই ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের শিল্পের পোস্টার বয়। সিঙ্গুরের বাসিন্দা রাজকুমার সাঁতরার গলায় আক্ষেপের সুর। তাঁর কথায়, “দেড় বিঘা জমি ছিল। সেদিন ওরা বুঝিয়েছিল তাই আন্দোলন করেছিলাম। আজ চাষ করতে পারছি না। শিল্পটা হলে ছেলেটা করে খেত। আমায় বুঝিয়ে ছিল এখন বললে বলে, তুই গিয়েছিলি কেন।’’

২০০৬ সালের ১৮ মে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার দিনই সিঙ্গুরে ছোট গাড়ি তৈরির কারখানা গড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন রতন টাটা। এক বছরের মধ্যে ন্যানো কারখানা তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। কিন্তু তারপরই শুরু হয় তৃণমূলের জমি আন্দোলন। তারপরের ঘটনা সকলেরই প্রায় জানা। ১৫ বছর আগে রাজ্য ছেড়ে চলে গেছেন টাটারা। আদালতের নির্দেশে জমি ফেরত পেয়েছেন জমিদাতারা। না হয়েছে শিল্প, না হয়েছে আগের মতো চাষাবাদ। কালের নিয়মে সেই জমিতেই এখন মাছ চাষ হচ্ছে। তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম জলাশয়। তাতে খেলে বেড়াচ্ছে মাছ। জমির মালিক বনমালী মাইতি বলেন, “আমরা তখন জমি দিয়ে দিয়েছিলাম। তখন শিল্প হোক আমরা চেয়েছিলাম। পরিস্থিতি বলতে, এখন যে হয়েছে এইটা এই পুকুর করে দিয়েছি। পুকুর করে দিয়েছে সরকার থেকে আমাকে এটা করে দিয়েছে।’’

সিঙ্গুরে শিল্প হয়নি। কারখানার জমিতে ফেরেনি কৃষিও। তবে সম্প্রতি কারখানা না হওয়ায় ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডকে হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ৩ সদস্যের আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনাল। সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের ওপর ভর করে ২০১১-য় ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। আর সেইসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম রাজনৈতিক সঙ্গী ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। যিনি আজ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, “এখানে একটা তৈরি করা কারখানা ডিনামাইট দিয়ে সিঙ্গুরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা নন্দীগ্রামের লোক তো শিল্পবিরোধী নই। আমরা তো জেলিংহ্যামে শিল্প চেয়েছিলাম। কিন্তু, নন্দীগ্রামে যে কায়দায়, মাননীয় লক্ষ্মণ শেঠ, গ্রামগুলো নিয়ে নিতে চেয়েছিলেন ব্রিটিশের মতো, তার আমরা বিরোধিতা করেছি। ২৭টা গ্রাম কেন নিয়ে নেবে, ইংরেজদের মতো?’’


আরও পড়ুন: ABP Exclusive: 'পরিযায়ী শ্রমিক তকমা লেগে গেছে,' গুজরাতে টাটাদের কারখানায় কর্মরত বাঙালিদের গলায় আক্ষেপের সুর