সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি: ‘চুরি বিদ্যা মহা বিদ্যা, যদি না পড়ো ধরা’... ধরা না পড়ারই যাবতীয় বন্দোবস্ত করে রাখা হয়েছিল। বাড়ি, গুদাম ঘর এমনকি খড়ের গাদাও নয়, কচুরি পানায় ঢাকা পচা ডোবার নীচে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল ‘গুপ্তধন’। কিন্তু তাতেও চাপা থাকল না চোলাই কারবারিদের (Hooch Consumption) কীর্তি। জল ছেঁচে মজুত করে রাখা যাবতীয় রসদ বার করে আনল পুলিশ।


হুগলির (Hooghly News) পোলবার (Polba News) মহেশপুরের ঘটনা। সেখানে একটি ডোবায় মাছ ধরার প্রস্তুতি চলছিল। সেই মতো পাম্প বসিয়ে শুরু হয় জল ছেঁচার কাজ। কিন্তু জলস্তর নামতে শুরু করলে, কচুরিপানার ফাঁকে ইতিউতি প্লাস্টিকের ড্রাম চোখে পড়ে। তাতে কী না কী রয়েছে ভেবে, আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় মানুষেরা। তাই খবর দেওয়া হয় পোলবা থানায়। তাতেই পর্দাফাঁস হয় চোলাই কারবারিদের।


এ দিন ওই ডোবায় জল ছেঁচে তোলার সময় কচুরিপানার মধ্যে সারি সারি নীল রঙের প্লাস্টিকের ড্রাম চোখে পড়ে। কচুরি পানা সরিয়ে সেগুলিকে উদ্ধার করে তোলা হয়। ভিতরে কী থাকতে পারে, তা ভেবেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। কিন্তু পুলিশ পৌঁছতেই রহস্যের উন্মোদন হয়। জানা যায়, অন্য কিছু নয়, সারি সারি ড্রামে ভরে রাখা হয়েছে চোলাই তৈরির যাবতীয় কাঁচামাল (Hooch Raw Materials Recovered)।


আরও পড়ুন: Nadia Marriage at old age : বৃদ্ধাশ্রমে প্রথম দেখাতেই প্রেম ! ষাট পেরিয়ে সাতপাকে বাঁধা পড়লেন এই দম্পতি


ডোবা থেকে চোলাই তৈরির কাঁচামাল উদ্ধার হওয়ায় আবগারি দফতরকে খবর দেয় পোলবা থানার পুলিশ। জানা যায়, চোলাই তৈরির জন্য নিশাদল অর্থাৎ অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড মিশিয়ে গুড় পচতে দেওয়া হয়েছিল ঠান্ডা জলে। ওই পচা গুড় দিয়ে তৈরি হয় চোলাই। মহেশপুর গ্রামের পাশেই আমদাবাদ গ্রামে বেআইনি চোলাই ভাটি চলে। এই ঘটনার সঙ্গে তার যোগসূত্র রয়েছে কিনা, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।


তবে চোলাই তৈরি করে বাজারে বিক্রির জন্যই যে ডোবায় সারি সারি ড্রাম লুকিয়ে রাখা ছিল, সে ব্যাপারে নিশ্চিত পুলিশ। মোট ৩০টি চোলাইয়ের উপাদান বর্তি ড্রাম উদ্ধার হয়েছে ওই ডোবা থেকে। সেগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।


খোলা আকাশের নীচে চোলাই মদ তৈরিতে নিশাদল, ধুতরার বীজ ছাড়াও, ছত্রাকও মিশিয়ে থাকেন চোলাই কারবারিরা। তার জেরে অল্প পরিমাণ চোলাই মদ পান করলেই বেশি নেশা হয়। সরকার অনুমোদিত দেশি মদের অর্ধেক দামে তা বাজারে বিক্রি হয়। তাই গ্রামে, গঞ্জে দরিদ্র মানুষদের কাছে তার চাহিদা রয়েছে।


কিন্তু তাতে প্রায়শই হিতে বিপরীত হয়। অদক্ষ হাতে চোলাই তৈরি করতে গিয়ে রাসায়নিকের পরিমাণ ঠিক থাকে না। ফলে চোলাই পান করে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয় বহু মানুষের। চোলাইয়ের এই কারবার রুখতে তাই প্রায়শই অভিযানে নামে পুলিশ এবং আবগারি দফতর।