সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি : শীতের রোদ গায়ে মেখে বড়দিনে অনেক বাঙালির ডেস্টিনেশনই ব্যান্ডেল চার্চ। প্রতিবারই ক্রিসমাসে সেজে ওঠে ব্যান্ডেল চার্চ। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। আলো দিয়ে সাজানোর পাশাপাশি গীর্জার সামনে গোশালা তৈরি করা হচ্ছে।যেখানে যীশুর জন্ম বৃত্তান্ত তুলে ধরা হবে সেখানে।
বড় দিনের আগে থেকেই দর্শনার্থীদের ঢল নামে ব্যান্ডেল চার্চে। তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবারো জোরদার। চার্চের নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষী থাকছে রাতভর। সেইসঙ্গে মোতায়েন অতিরিক্ত পুলিশও। ব্যান্ডেল চার্চের ফাদার জনি নেডুনাট জানান,রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে গির্জা।
পশ্চিমবাংলার ঐতিহ্যবাহী ব্যান্ডেল ব্যাসিলিকা বা ব্যান্ডেল চার্চ, সেভাবে দেখতে গেলে বাংলায় নির্মিত প্রথম খ্রিষ্টান উপাসনা গৃহ। ১৫৯৯ খ্রীষ্টাব্দে যখন এই গির্জা তৈরি হয়, তখন তা নিতান্তই ছোট। এটি একটি পর্তুগিজ চার্চ। ১৫৩৬ সালে পর্তুগীজরা সপ্তগ্রামে বানিজ্য করতে আসে এবং সেখানে বসতি গড়ে তোলে। ১৫৭১ সালে তারা মুঘল সম্রাট আকবরের থেকে হুগলিতে শহর নির্মাণের অনুমতি পায়। তখন থেকে তারা হুগলিতে বসবাস শুরু করে। গোয়া থেকে অগস্টিন ফাদারদের নিয়ে এসে ১৫৯৯ সালে গির্জা তৈরি হয় উপাসনার জন্য।
কিন্তু পর্তুগিজদের উপর মুঘলরা সন্তুষ্ট ছিল না। মুঘল সম্রাট শাহজাহান হুগলির এই পর্তুগিজ কলোনি আক্রমণ করেছিলেন। যুদ্ধে পরাজিত হয় পর্তুগিজরাই। মৃত্যুও হয় প্রচুর। তারপর নাকি সেখানে পর্তুগিজদের কেল্লা ও গির্জাও ধ্বংসও করে মুঘলরা। বন্দি করা হয় গির্জার পাদ্রি ফাদারকে। তাঁকে আগ্রায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মত্ত হাতির সামনে ফেলে দেওয়া হলেও আশ্চর্যজনকভাবে তিনি বেঁচে যান। এই অলৌকিক ঘটনা দেখে শাহজাহানের মন গলে। তিনি বিশাল জমিও দান করেন নতুন গির্জা তৈরির জন্য।
ফাদার জানান, ২৪ ডিসেম্বর মধ্যরাতে প্রভু যীশুর জন্ম মুহূর্ত উদযাপিত হবে। রাত সাড়ে দশটা থেকে চলবে বিশেষ প্রার্থনা। বড় দিন ও বর্ষবরণের উৎসবে ভিড় এড়াতে ২৫ ডিসেম্বর ও ১ লা জানুয়ারি ব্যান্ডেল গির্জা বন্ধ থাকে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য। তবে যেখানে গোশালা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে যাওয়ার অনুমতি থাকে। ব্যান্ডেল চার্চের সামনে বড় দিন উপলক্ষে মেলা বসে। হরেক পসরা নিয়ে সাজিয়ে বসেন দোকানীরা,বিকিকিনি হয় ভালোই। গঙ্গার পারে খোলা মাঠেও মেলা হয়, চলে পিকনিক। সব মিলিয়ে এই কটা দিন জমজমাট থাকে ব্যান্ডেল চার্চ। শুধু ব্যান্ডেল চার্চ নয়, কে বড়দিন উপলক্ষে রঙিন আলোয় সাজিয়ে তোলা হয়েছে চন্দননগর চার্চও।