সুনীত হালদার, হাওড়া: মারণ ভাইরাস করোনা প্রভাব ফেলছে জীবনের সবক্ষেত্রে। কমেছে ব্যবসা বাণিজ্য, চাকরি হারিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। এমনকী বিধিনিষেধ জারি হয়েছে পুজো-অর্চনাতেও। তেমনই করুণ ছবি ধরা পড়ল হাওড়া শিল্পাঞ্চলেও। সামনেই বিশ্বকর্মা পুজো। অথচ সেই উৎসাহ চোখে পড়ছে না কোথাওই। হাওড়া শিল্পাঞ্চলেও এবছর মন্দার কারণে আকারে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে বিশ্বকর্মার মূর্তি। কঠিন পরিস্থিতি প্রতিমা তৈরির গোলাগুলিতেও। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে অর্ডারের সংখ্যা অনেকটাই কম। বিভিন্ন ছোট কারখানার মালিকেরা জানাচ্ছেন, করোনা আবহে কার্যত লকডাউনের জেরে এবছরে খুব ছোট করেই বিশ্বকর্মা পুজো করা হবে। প্রতিমা শিল্পীদের বক্তব্য, ঠিক মতো কারখানা চলছে না। এবছর তাই প্রতিমার চাহিদা কমেছে। বেশিরভাগ জায়গায়ই কারখানা মালিকেরা ঘট পুজো করার কথা ভেবেছেন।


এক সময় হাওড়া শিল্পাঞ্চলকে বলা হত 'শেফিল্ড অফ ইস্ট'। মূলত এখানকার ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের অসংখ্য ছোট বড় কারখানার নাম ছিল গোটা দেশজুড়ে। স্বভাবতই প্রতি বছর বিশ্বকর্মা পুজোর আগে এই সব কারখানায় আয়োজন থাকত তুঙ্গে। জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হত বিশ্বকর্মা পুজো। বিশাল আকারের বিশ্বকর্মা মূর্তির পাশাপাশি আলোয় ঝলমল করে উঠত এখানের কারখানাগুলি। শুধু তাই নয়, এই সময়ে কর্মীদের বোনাসও দেওয়া হত। পুজোর দিনে সারাদিন খাওয়া দাওয়া হইহুল্লোড় লেগেই থাকত শিল্পাঞ্চলে। 


কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই নোট বন্দি ও আর্থিক মন্দার কারণে ধুঁকছে ছোট কারখানাগুলি। এরপর আসে করোনা। গত বছর থেকে করোনা এবং লকডাউনের কারণে লোকাল ট্রেন চলাচল প্রায় বন্ধ। তার ফলে গ্রামের দিক থেকে শ্রমিক আসা কমে গেছে। ফলে কাটছাঁট করতে হয়েছে পুজোর বাজেটে। গত বছরের মত এই বছরেও অধিকাংশ কারখানায় মূর্তির আকার অনেকটাই ছোট হয়ে গেছে। এমনকী অনেক কারখানায় মূর্তির পরিবর্তে এবার ঘট পুজো করা হচ্ছে। কারখানার মালিকরা জানিয়েছেন, করোনা আবহে অর্ডার এবং পেমেন্ট ঠিক মত না আসার কারণে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের। তাই তাঁরা এবার যা হোক করে পুজো সারবেন। এদিকে শিল্পের এই মন্দার প্রভাব পড়েছে মৃৎশিল্পেও। হাওড়ার প্রতিমা শিল্পীরা জানাচ্ছেন, 'এবারে অনেক কম সংখ্যক বিশ্বকর্মা প্রতিমা তৈরির অর্ডার পেয়েছি। তাও সাইজে আবার ছোট। কাঁচামালের দাম বাড়লেও প্রতিমার দাম বাড়াতে পারছি না।' এমন অবস্থায় বেশ সমস্যায় পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। 


হাওড়া শিল্পাঞ্চল কবে কারিগরি দেবতা বিশ্বকর্মার আশীর্বাদে ফের ঘুরে দাঁড়াবে সেই আশায় দিন গুনছেন শ্রমিকরা।