কলকাতা: কখনও এগরা, কখনও বজবজ কিংবা মহেশতলা, কখনও আবার দত্তপুকুর। গত কয়েক বছরে রাজ্য়ের নানা প্রান্তে বেআইনিভাবে বাজি মজুত করায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এবার সেই তালিকায় যোগ হল হাওড়ার উলুবেড়িয়া (Uluberia News)। আর কবে বাজি কারখানার ক্লাস্টার তৈরি হবে? কবে বন্ধ হবে, ঘরে ঘরে অবৈধ বাজি তৈরির কাজ? বাজি তৈরি করতে গিয়ে, মৃত্যু থামবে কবে? উঠছে প্রশ্ন।


মহেশতলা, বজবজ থেকে এগরা-দত্তপুকুর-মধ্যমগ্রাম ধ্বংসের ছবিগুলো কমবেশী একই রকম। বদলে যায় শুধু সাল-তারিখ আর জায়গার নাম। বেআইনি বাজি কারখানার বিস্ফোরণ, ছারখার করেছে বাংলার বিভিন্ন জায়গাকে। কেড়েছে জীবনও। কাউকে দিয়েছে সারা জীবনের ক্ষত। প্রতিবার বাজি বিস্ফোরণ হলেই সতর্কতা,  নজরদারি, কঠোর বিধির মতো শব্দগুলো ফিরে আসে সরকার ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের মুখে। কিন্তু, তারপর আবার একটা বিস্ফোরণ সেগুলোকে দাঁড় করিয়ে দেয় প্রশ্নচিহ্নের মুখে। শনিবারের গভীর রাতে, হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় বাড়িতে মজুত বাজি থেকে বিস্ফোরণের ঘটনার পরও যে প্রশ্নগুলো আরও একবার উঠতে শুরু করেছে।

গতবছরের ২০ মার্চ দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায় বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে প্রাণ যায় ৩ জনের। ওই বছরই ১৬ মে, পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বেআইনি বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। কেড়েছিল ১১টি প্রাণ। কিন্তু, তার থেকে প্রশাসন শিক্ষা নেয়নি, সেটা স্পষ্ট হয়ে যায় এক সপ্তাহের মধ্য়েই। ওই বছর ২২ মে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজে বেআইনিভাবে মজুত বাজিতে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় এক নাবালিকা-সহ ৩ জনের। বিস্ফোরণের জেরে আগুন লেগে ভেঙে পড়ে অস্থায়ী টিনের ছাউনি। তাতেই চাপা পড়ে যান তিনজন। আর বেরতে পারেননি। খাদিকুল ও বজবজের রেশ কাটার মধ্যেই, গতবছর ২৮ অগাস্ট, ফের বেআইনি বাজি কারখানার বিস্ফোরণ কাঁপিয়ে দেয়, উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরকে। মৃত্য়ু হয় ৯ জনের। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল, যে ২০০ মিটার দূরে মিলেছিল দেহাংশ। বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছিল ১০ কিলোমিটার দূর থেকেও।

বিরোধীদের প্রবল চাপের মুখে, বিস্ফোরণের ১১ দিন পর এগরার খাদিকুলে গিয়ে বাজি কারখানার ক্লাস্টার তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, "আমরা নিজেরা সরকার থেকে, আমরা বাজি কারখানা তৈরি করবার ক্লাস্টার তৈরি করব এবং সেখানে যারা বাজি কারখানার মালিক, বাজি কারখানা করতে চান, ফায়ার ক্র্যাকার নয়, যা জীবন নষ্ট করে।'' বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, খাদিকুলে বিস্ফোরণ ও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর গত বছর ৫ অগাস্ট, বাজি ব্যবসায়ী, বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্যদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব। সেখানেই ঠিক হয়, জেলায় জেলায় সবুজ বাজি তৈরির ক্লাস্টার তৈরি হবে। সেই নির্দিষ্ট ক্লাস্টারে এসে বাজি তৈরি করবেন শ্রমিকরা। যাতে নজরদারি চালানো যায়, তার জন্য জন্য নির্দিষ্ট গোডাউন থাকবে। মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা গেছে সবুজ বাজির কথাও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, "আর ফায়ার ক্র্যাকার নয়, আপনি সবুজ বাজি তৈরি করুন।''


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।    
আরও পড়ুন: RG Kar Protest: দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং বিচারের দাবি, কাল ফের পথে চিকিৎসকরা