সুনীত হালদার, হাওড়া: ফুঁসে ওঠা নদী, জলমগ্ন গ্রাম। অসহায় পরিস্থিতি। তারই মধ্যে নবজাতকদের জন্মে জীবনের জয়গান। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেও হাসপাতালে সুস্থভাবে সন্তানের জন্ম দিলেন সাত প্রসূতি। জল নামা না পর্যন্ত হাসপাতালেই রাখার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে মা ও নবজাতকদের।
জলে ভাসছে গ্রামের পর গ্রাম। রাস্তায় জলস্রোত। অসহায় মানুষের কান্না। প্রতিকূল এই পরিস্থিতিতে যখন প্রাণ বাঁচিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুক খুঁজে বের করা একটা লড়াই, তখন নতুন প্রজন্মকে নিরাপদে ভূমিষ্ট করা কঠিনতম চ্যালেঞ্জ। কিন্তু নতুন প্রাণের স্পন্দনই, শেষ পর্যন্ত সেই লড়াইয়ে জিতিয়ে দিল মানুষকে। জিতিয়ে দিল বানভাসি হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরকে।
দুর্বিপাক, প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে গত কয়েক দিনে উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে সাত নব জাতকের জন্ম দিয়েছেন সাত মহিলা। আরও আট শিশু পৃথিবীর আলো দেখার অপেক্ষায়। ঘরদোর জলে ডুবলেও, নতুন প্রাণকে পৃথিবীর আলো দেখানোর আনন্দে দুঃখ ভুলেছেন উদয়ারায়ণপুরের বহু পরিবার।
এক নবজাতকের মা পূজা বেরা জানিয়েছেন, বন্যায় যখন প্লাবিত চারদিক, তখন যন্ত্রণা ওঠে। নৌকো করে নিয়ে আসে। মেয়ের জন্ম হয়েছে। আমি খুব খুশি।
আরেক নবজাতকের মা বিষ্ণুপ্রিয়া দলুই জানাচ্ছেন, বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছিল। কোনওরকমে নৌকোয় করে হাসপাতালে। সন্তান হয়েছে। কয়েকদিন আগে বৃষ্টি ও ব্যারাজের ছাড়া জলে আচমকা ভেসে যায় হাওড়ার উদয়নারাণয়পুরের অসংখ্য গ্রাম। এই পরিস্থিতিতে প্রসূতিদের নিয়ে চিন্তায় পড়েন বাড়ির লোক। তবে শেষ পর্যন্ত নৌকো ও অ্যাম্বুল্যান্সে করে সময় মতো পৌছনো যায় হাসপাতালে।
উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার কৌশিককুমার সাউ-এর কথায়, ক্রাইসিসের সময়ও নিয়ে আসা হয়েছে। ১৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। ৭ জন মহিলা সন্তানের জন্ম।
উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সমীর পাঁজার কথায়, প্রশাসন পঞ্চায়েত সমিতিতে নির্দেশ বলি যাতে বন্যার মধ্যে ওইসব মহিলাদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা যায়। সেইমতো প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা হয়। এখনও বন্যার জল গ্রামে আছে। তাই সেখান থেকে যতদিন না পর্যন্ত জল নামে ততদিন পর্যন্ত মা এবং শিশুরা হাসপাতালেই থাকবে।
ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে উদয়ারায়ণপুরের বন্যা পরিস্থিতির। আর ক’দিন পরেই বাপের বাড়িতে আসবে উমা। ঘরে ফিরবে নবজাককরাও। নতুন দিনের উদয়ের অপেক্ষায় উদয়নারায়ণপুর।