সন্দীপ সরকার, কৃষ্ণেনদু অধিকারী ও আশাবুল হোসেন, কলকাতা : রামনবমীর মিছিল (Ramnavami Procession) ঘিরে হাওড়ার শিবপুরে অশান্তির ঘটনায় শুরু হয়েছে ভিডিও-যুদ্ধ ! ঘটনার ভিডিও সামনে এনে পরস্পরকে আক্রমণ করেছে তৃণমূল, বিজেপি দুই দলই। অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় (Abhishek Banerjee) যে ভিডিও ট্য়ুইট করেছেন, তাতে একজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক থেকে আরেকটি ভিডিও দেখিয়ে আক্রমণ শানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীও (Suvendu Adhikari)।


হাওড়ার অশান্তি নিয়ে রাজনৈতিক বাগযুদ্ধের পারদ ক্রমশ চড়ছে। হাওড়ার অশান্তি প্রসঙ্গে শুক্রবার একটি ভিডিও ট্য়ুইট করেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। যেখানে শোভাযাত্রায় একজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যাচ্ছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এ প্রসঙ্গে বলেন, কোমরে বন্দুক পিস্তল গুঁজে রামনবীর মিছিল ! কোথাকার উচ্ছৃঙ্খলা ! দুর্গাপুজোয় হয় ! দীপাবলিতে হয় ! খুশির ইদ পালন করি। ইদে এরকম নৈরাজ্য় শুনেছেন। বড়দিনে ক্রিস্টমাস হয়, শুনেছেন এরকম হয়েছে। খালি রামনবমীকে কেন্দ্র করে কেন হয়। রাম তো ডিজে- প্রতীক নয়, যে ডিজে বাজিয়ে প্রার্থনা করতে হবে।

এদিনই সাংবাদিক বৈঠকে আবার আরেকটি ভিডিও দেখান শুভেন্দু অধিকারী। বিরোধী দলনেতা বলেন, মোমিনপুরে এনআইএ হওয়ার ফলে খিদিরপুরের মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। আমরা আশা করি, রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি, যারা পেট্রোল বোমা ফেলেছেন, ভাইপো ট্য়ুইট করেছেন, আমরা বলছি, বন্দুক যদি থাকে, কোনও দল দেখার দরকার নেই। আমরা পুলিশমন্ত্রীর পদত্য়াগ চাইছি।

রামনবমীর মিছিলের অনুমতি নিয়েও বাগযুদ্ধে জড়িয়েছেন শুভেন্দু ও অভিষেক। অভিষেক বলেন, যে কোনও সম্প্রদায়ের মানুষের উৎসব পালনের অধিকার আছে। মমতা বলেছিলেন, প্রত্য়েক শোভাযাত্রার পারমিশন দেবে। কিন্তু, সেটা মেনে করতে হবে। অনুমতি ছাড়া মিছিল করেছিল।

অভিষেক আরও বলেন, "গতকাল অত্য়ন্ত দুর্ভাগ্য়জনক ঘটনা হাওড়ার শিবপুরের পিএম বস্তিতে হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কাছে খবর ছিল, দুদিন আগে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ধর্না শুরু করেন, তখনও তিনি বলেন, খবর রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় অশান্তি, গুন্ডামি, সংহতি, শান্তিকে নষ্ট করার চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। প্রত্য়েক রাজ্য়বাসীর কাছে আবেদন করেছিলেন। তারপরও একটা দল নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে এবং গায়ের জোরে, পুলিশ পারমিশন ছাড়া, পরিসংখ্য়ান তুলে দেব। কোনও পারমিশন ছাড়া গায়ের জোরে, যে রুটে এক বছর আগেও সমস্য়া হয়েছিল, সেই রুটেই সেই অশান্তির যাতে পুনরাবৃত্তি হয়, গায়ের জোরে, রামনবমীর নামে শোভাযাত্রা করে।"

হাওড়ায় রামনবমী ঘিরে অশান্তির প্রসঙ্গে আবার বামেরা টেনে আনছেন জ্য়োতি বসুর সময়কার কথা। ১৯৪৬ এর অভিজ্ঞতা থেকেই জ্যোতি বসু বুঝেছিলেন, সরকার না চাইলে অশান্তি হয় না। তাই ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার পর দেশ জুড়ে অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়লেও, বাংলায় সেই আগুন জ্বলতে দেয়নি তাঁর সরকার।


সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, মমতা বলেছিলেন আগেই জানতেন। সেই জন্য় নবান্নে না থেকে ধর্নায় বসেছিলেন। বলছেন পুলিশের শৈথিল্য়। তাহলে তো পুলিশমন্ত্রীর দায়।

রামনবমী পালনের পদ্ধতি নিয়েও নাম না করে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন অভিষেক। তিনি বলেছেন, তরোয়াল নিয়ে, গাড়ি ভ্য়ান জ্বালানো হয়েছে। উগ্রভাবে ডিজে চালিয়ে রামকে স্মরণ করার এ কোন প্রথা ! জন্মের পর এই প্রথা লক্ষ্য় করিনি। তিনটে বিধায়ক জেতার পর এরা রাজ্য়টাকে পৈতৃক সম্পত্তি ভাবা শুরু করে দিল। একে অপরের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দাও, যে করে হোক সৌহার্দ্য় ভেঙে দাও।

কিন্তু নানা মহলে প্রশ্ন হল, রাম নবমী ঘিরে অশান্ত হবে কেন ? রাম যে কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের মধ্য়ে আবদ্ধ নয়, তাঁর গুণমুগ্ধ যে সকলে, তার প্রমাণ মেলে প্রখ্য়াত উর্দু কবি এবং পাকিস্তান তৈরির অন্য়তম উদ্য়োক্তা আল্লামা ইকবালের লেখা থেকেও। তিনি রাম সম্পর্কে লিখেছিলেন, হ্যায় রাম কে ওজুদ পে হিন্দুস্তান কো নাজ অ্যাহল-এ-নজর সমঝতে হ্যাঁয় ইসকো ইমাম-এ-হিন্দ। অর্থাৎ রামের জন্য় গোটা ভারত গর্বিত ! তাঁকে ইমাম-এ-হিন্দ আখ্য়া দিয়েছিলেন ইকবাল।