কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও হিন্দোল দে, কলকাতা : ২২ ডিসেম্বর নতুন দল ঘোষণা করার কথা রয়েছে হুমায়ুন কবীরের। তার আগে, বাম, কংগ্রেস, ISF এবং MIM, দরজা খোলা রাখলেন সবার জন্যই। কোনও দলই তাঁর কাছে অচ্ছুত না বলেও, অন্তঃর্নিহিত বার্তা দিয়ে রাখলেন হুমায়ুন কবীর। 

Continues below advertisement

কয়েকমাস পরই বিধানসভা ভোট। তার আগে নতুন দল তৈরির ঘোষণা করেছেন তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সংখ্য়ালঘু বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। এবার নতুন জল্পনা উস্কে ISF, সিপিএম, কংগ্রেস এবং আসাদউদ্দিন ওয়েসির মিমের উদ্দেশে খোলাখুলি বার্তা দিলেন তিনি। হুমায়ুন কবীর বলেন, "আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যুত করা, আর ভারতীয় জনতা পার্টিকে ক্ষমতায় আসতে না দেওয়া বাংলায়। আমার কৃতিত্বে যারা বিশ্বাসী, তারা কংগ্রেস, ISF, সিপিএম, MIM, কেউ আমার কাছে অচ্ছুত না।" 

২০১১ থেকে এরাজ্য়ের সংখ্য়ালঘু ভোটব্য়াঙ্কে কার্যত একচেটিয়া আধিপত্য় তৃণমূলের। কিন্তু, ২০২১ সালে ৬৭ শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্য়ুষিত ভাঙড়ে তৃণমূলকে হারিয়ে জয়ী হন ISF-এর নৌশাদ সিদ্দিকি। ২০২৩ সালে ৬৮ শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্য়ুষিত সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূলকে হারিয়ে দেয় বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী। এই আবহে হুমায়ুন কবীর নতুন দল তৈরির ঘোষণা করার পর থেকেই বারবার প্রশ্ন উঠছে, এমনটা হলে কি তৃণমূলের সংখ্য়ালঘু ভোটব্য়াঙ্ক ভাগ হয়ে যেতে পারে? তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, হুমায়ুনের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে আলোচনার পথ খোলা রেখেছেন ISF বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি এবং সিপিএমের রাজ্য় সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। 

Continues below advertisement

নৌশাদ সিদ্দিকি বলেন, "কোন মূল লক্ষ্য নিয়ে দল করতে চাইছে, কী কী ইস্যুর ওপর কাজ করতে চাইছে, সেগুলো আমরা অবশ্যই স্টাডি করব। তার পরে নিশ্চিতভাবে বলতে পারব। তবে অনুরোধ একটা করব, আমাদের এই দল নতুন তৈরি করা, বা আলাদা আলাদা করে লড়াই করার সুযোগে তৃণমূল কংগ্রেসের যে ভোটটা বেরিয়ে গেছিল হাত থেকে, ফিরে না আসতে সহযোগিতা করে একটা ভুল মেসেজ গিয়ে। আমাদের আলাদা আলাদা লড়াই করা, বা নতুনভাবে দল তৈরি করাতে বিজেপি না কোনওভাবে লাভবান হয়ে যায়।"

মহম্মদ সেলিম বলেছেন, "আমরা বাংলা বাঁচানোর জন্য মানুষকে আবেদন করছি।"

নতুন দলের সঙ্গী হিসাবে কংগ্রেসে আপত্তি নেই। এমনটা আগেও জানিয়েছেন হুমায়ুন কবীর। কিন্তু এরাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশকে নিয়ে ছুঁৎমার্গ যে তাঁর রয়েছে এদিন তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। হুমায়ুন কবীর বলেন, "কংগ্রেসের নেতা কে? শুভঙ্কর সরকার সাইনবোর্ড সম্বলিত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তার কোনও পার্সেন্টেজই নেই। ওখানে কংগ্রেসের দু'জন নেতা আজকের দিনে। এক প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি, ৫ বারের সাংসদ, অধীর রঞ্জন চৌধুরী, মুর্শিদাবাদে তাঁর মাস-ভ্যালু আছে, আরেকজন হচ্ছেন ঈশা খান, মালদার। তাঁরা যদি আমার সঙ্গে বসতে চান নিশ্চয়ই ওয়েলকাম জানাব।"

এ প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, "কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা তাঁর বাক-স্বাধীনতা নিয়ে তিনি তাঁর মতো কথা বলতেই পারেন। সেখানে কোথাও বাধা-নিষেধ নেই। এটাই সংবিধান বলে। তাইজন্য আমি ধর্মীয় গ্রন্থ-পাঠ যে যার মতো করেন, আমি কিন্তু সংবিধান পাঠের আয়োজন করেছি। সবাইকে আমরা আহ্বান করছি। কংগ্রেস বাদেও যারা আসতে চান...।"   

হুমায়নের বার্তায় অবশ্য় গুরুত্ব দিচ্ছে না তৃণমূল। রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, "বিজেপি ভোটের আগে গতবার দেখা গেছে চার্টার্ড ফ্লাইট পাঠিয়েছিল কিছু লোককে তৃণমূল থেকে নিয়ে যেতে নানা কথা বলে। অনেকে গিয়েছিলেন। কেউ তদন্ত এড়াতে, কেউ অন্য কারণে। যারা চার্টার্ড ফ্লাইটে গিয়েছিলেন তাঁরা সব ভোটের পরে ফোন করেছিলেন। দিদি ফ্লাইট চাই না, একটা অটো পাঠান ফিরে যাব। বিজেপিকে হারাতে গেলে একটাই দল, তৃণমূল কংগ্রেস। একজন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।"

শেষ অবধি বিধানসভা ভোটে কে কার হাত ধরবে? সেটাই দেখার।