মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান: পুরআইন উড়িয়ে একাধিক ওয়ার্ডে বেআইনি ভাবে বসানো হচ্ছে সাবমার্সিবল পাম্প (Pump)। রমরমিয়ে চলছে ভূগর্ভস্থ জল লুঠ। তার জেরে এলাকায় জলের স্তর নামছে। দেখা দিচ্ছে জলসঙ্কট। এমনই অভিযোগ উঠেছে দুর্গাপুর পুরসভার একাধিক এলাকায়। তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। উপযুক্ত পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জল লুঠের অভিযোগ: টাকা-গয়না লুঠের অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু, জল লুঠ! হ্য়াঁ, এবার এমনই অভিযোগ উঠল পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে। বেনাচিতি বাজার লাগোয়া একাধিক ওয়ার্ডে গেলেই চোখে পড়বে এই দৃশ্য, যেখানে নতুন বাড়িতে বসানো হয়েছে সাবমার্সিবল পাম্প। আর এতেই জলসঙ্কটের অশনি সঙ্কেত দেখছেন দুর্গাপুর পুরএলাকার ১৩, ১৪ এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের বড় অংশ। তাঁদের অভিযোগ, পুরআইন উড়িয়ে বেআইনিভাবে বোরিং করে ভূগর্ভস্থ জল কার্যত লুঠ করা হচ্ছে। তাঁদের আরও অভিযোগ, এই প্রবণতার ফলে, এলাকায় ভূগর্ভস্থ জলের স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। দুর্গাপুর পুরসভার এলাকার বাসিন্দা কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, “বোরিং মিউনিসিপ্যালিটি অ্যালাউ করে না। কীভাবে করছে না বুঝি না। এরা পারমিশন করে না। একজনের দেখে অন্যরাও করছে। জলসঙ্কট শুরু হবে। কালীনগরে অলরেডি শুরু হয়েছে। জলের লেয়ার নেমে যাচ্ছে। কুয়োতে জলই নেই।’’
৫ সেপ্টেম্বর তৃণমূল পরিচালিত দুর্গাপুর পুরসভার মেয়াদ শেষ হয়েছে। তারপর থেকে ৪৩ ওয়ার্ডের দুর্গাপুর পুরসভার দায়িত্ব সামলাচ্ছে ৫ সদস্যের পুরপ্রশাসকমণ্ডলী। বিদায়ী মেয়র, ডেপুটি মেয়র ও ৩ জন বিদায়ী মেয়র পারিষদ রয়েছেন ওই প্রশাসকমণ্ডলীতে। ভূগর্ভস্থ জল লুঠের অভিযোগ সামনে আসতেই শাসক শিবিরকে নিশানা করেছে বিরোধীরা। ওই বিদায়ী বিজেপি কাউন্সিলর চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, “৪৩টা ওয়ার্ডের জন্য় ৪৩টা প্রতিনিধি চাই। তা না করে ৫ জন সদস্য নিয়ে পুরসভা চলছে। এরা আসলে বুঝে গিয়েছে, ওয়ানডে ম্যাচ খেলব। মানুষের ভোটে নয়, রিগিং করে যে কোনও ভাবে জিতে যাব। তাই মানুষের কাজ করার দায়বদ্ধতা নেই।’’ সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, “নগরোন্নয়ন সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। উদ্দেশ্য শুধু কাটমানি খাওয়া।’’
এলাকাবাসীর অভিযোগ ও জলসঙ্কটের বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর ও বিদায়ী মেয়র পারিষদ স্বাস্থ্য। দুর্গাপুর পুরসভার বিদায়ী মেয়র পারিষদ রাখি তিওয়ারি বলেন, “ যিনি জল দফতর দেখছেন সেই বিপ্লব লাহার সঙ্গে কথা হয়েছে। কর্পোরেশন অবশ্যই স্টেপ নেবে। কে কী বলছে, আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। সব দিক নদরে রেখে কাজ করছি।’’ পুর কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পর বেআইনি বোরিং রুখতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেটাই দেখার।
আরও পড়ুন: Nadia News: পুলিশের উপর হামলা, ছোড়া হল বোমাও! কালীগঞ্জে আহত ওসি-সহ ৫ পুলিশকর্মী