রাজীব চৌধুরী, মুর্শিদাবাদ: RG কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের (RG Kar Medical Collage and hospital doctor death) ঘটনার পর থেকে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজ্য। প্রতিদিন সুবিচার চেয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করছেন জুনিয়র চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের মানুষরা। পাশাপাশি রাজ্যের অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজ থেকে নানা অভিযোগ উঠে আসছে। সেখানেও কিছু মানুষ সিন্ডিকেট রাজের মাধ্যমে হাসপাতালগুলিতে নিজেদের ইচ্ছা খুশি মতো কাজ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। এবার জানা গেল থ্রেট কালচারের (threat culture) রমরমা চলছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে (Murshidabad medical college)। সেখানকার মেডিক্যাল অফিসারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা IMA-এর বহরমপুর শাখার সম্পাদক রঞ্জন ভট্টাচার্য। যদিও এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন মুর্শিদাবাদের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ সুমন বিশ্বাস।
এপ্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বহরমপুর শাখার সম্পাদক রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "এই থ্রেট সিন্ডিকেটের বিষয়টি হয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্বাচনের কয়েকদিন আগেই। সেই সময় প্রভাবশালী লবির তরফে ডাঃ সুমন বিশ্বাস নির্বাচনের সময় ব্যালট সংগ্রহ করে সেগুলি মাননীয় বিধায়ক ডাঃ সুদীপ্ত রায়ের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলেন। এরপর সুমন বিশ্বাসই উত্তরবঙ্গ লবির অত্যন্ত কাছের হয়ে যান। আমি ১৪ বছর এই মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু, এই প্রভাবশালী লবি আমাকে বদলি করে দেয়। কারণ আমি থাকাকালীন তাঁদের অনেককিছু সুযোগ-সুবিধা নিতে দিচ্ছিলাম না। তাঁরা কিছু করতে পারছিলেন না। তারপর পরীক্ষার সময় প্রশ্নপত্রগুলি লিকআউট হওয়া শুরু হয়। এখনও এখানে কোন হস্টেলে কোন ছাত্র থাকবে। কে কোন ঘর পাবে। কার জন্য বরাদ্দ হবে। সবক্ষেত্রেই প্রভাব বিস্তার করেন ডাঃ সুমন বিশ্বাস।"
যদিও রঞ্জন ভট্টাচার্যের এই সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে তাঁর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ সুমন বিশ্বাস। ফোনে তিনি বলেন, "এই অভিযোগ অত্যন্ত হাস্যকর। আসলে উনি এখান থেকে প্রচুর টাকা পয়সা রোজগার করে একটা পাঁচতারা নার্সিংহোম করেছেন। এগুলো তো উনি করেই যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে উনি নিয়মিত প্র্যাক্টিস করে আসছেন। উনি যখন RMO ছিলেন তখন থেকেই উনি প্র্যাক্টিস করছেন। ওনার কোনো অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও।"
RG ক মেডিক্যাল কলেজে দুর্নীতির অভিযোগে সেখানকার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে সিবিআই গ্রেফতার করেছে। এই সন্দীপ ঘোষ একটা সময় ৫ বছর এই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজেই অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান ছিলেন। আরজি কর কাণ্ডের পর তাঁকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে একটি ছবি। যেখানে সন্দীপ ঘোষের পাশে আরও কয়েকজনের মধ্যে ছিলেন সুমন বিশ্বাসও।"
রঞ্জন ভট্টাচার্যের কথায়, "মুর্শিদাবাদ থ্রেট সিন্ডিকেট বলে ভাইরাল হয়েছে যে ছবিটি তার কিছুটা তো সত্যি, যাঁরা করেছেন তাঁরা নিশ্চয়ই দীর্ঘদিন ধরে আমার মতোই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন এবং যাঁরা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। যাঁরা আমরা ছাত্রদের ভালোবাসি। যারা বিপথে চলে গেছে তাদেরও বলছি তোমরা সঠিক রাস্তায় ফিরে এসো।
অন্যদিকে সুমন বিশ্বাস বলছেন, "ফুলেফেপে উঠেছেন তো উনি নিজেই। আমাকে বলে কোনও লাভ নেই। আমি যখন থেকে RMO হিসেবে জয়েন করেছি, আমি একটা নয়া পয়সাও প্র্যাক্টিস করিনি। কারণ আমার অনুমতি নেই । বাকি যে বলছেন যে সিন্ডিকেট করতে চেয়েছিলাম, সেটা ব্যক্তিগত কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা।"
বর্তমানে আরজি কর কাণ্ডের তদন্ত করছে CBI। কিন্তু, রাজ্য়ের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে যে ভয়ঙ্কর অভিযোগ উঠছে, তার কোনটা সত্য? আর কোনটা মিথ্যা? তা কি কখনও জানা যাবে?
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।