কলকাতা: সপুত্র কারামন্ত্রীর পর এবার আয়কর দফতরের নজরে বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিধায়ক। বিজেপি থেকে তৃণমূলে যাওয়া বিষ্ণুপুরের বিধায়কের চালকল ও অফিসে আয়কর হানা (Income Tax Raid)। বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষের চালকল ও অফিসে তল্লাশি।


২০২১-এর ৩০ অগাস্ট বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল যোগ দেন তন্ময় ঘোষ। বিষ্ণুপুর হাইস্কুল মোড়ে লজ রয়েছে বিধায়ক তন্ময় ঘোষের। এদিন সেখানেই তাঁর অফিসে যান আয়কর দফতরের অফিসাররা। বিষ্ণুপুরের চূড়ামণিপুরে বিধায়ক তন্ময় ঘোষের পরিবারের একটি রাইস মিল রয়েছে। তন্ময় ঘোষের রাইস মিলেও যান আয়কর আধিকারিকরা। আয়কর হানার বিষয়ের জানা নেই, দাবি বিষ্ণুপুরের বিধায়কের।


প্রসঙ্গত, সম্প্রতি রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি ও তাঁর ছেলে সুপ্রকাশ গিরিকে ( Minister Akhil Giri and Suprakash Giri) নোটিশ পাঠিয়েছে আয়কর দফতর (Income Tax)। ১৩ নভেম্বর তাঁদের হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুপ্রকাশ তৃণমূল পরিচালিত কাঁথি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্য়ান। চিঠি হাতে না পেলেও, মেল মারফত নোটিস পেয়েছেন। সেখানে নিজে উপস্থিত হয়ে বা প্রতিনিধি পাঠিয়ে নথি জমা দিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রী-পুত্র সুপ্রকাশ গিরির আশঙ্কা, বিজেপির কিছু নেতার বক্তব্যের পরেই আয়কর দফতরের নোটিস পাঠানোয় তদন্তে প্রভাব পড়তে পারে। তাই স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। যোগাযোগ করা হলেও প্রতিক্রিয়া এড়িয়েছেন কারামন্ত্রী অখিল গিরি। 


মূলত সম্প্রতি কাঁথি ও তমলুকের দুটি অনুষ্ঠানে নাম না করে মন্ত্রীর আয়কর নোটিস পাওয়া নিয়ে কটাক্ষ করেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যে ইতিমধ্যেই দুর্নীতি মামলায় নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর। সেই আবহেই অবৈধ সম্পত্তির ইস্য়ু তুলে শুভেন্দু-তথা অধিকারী পরিবারকে আক্রমণ করেছিলেন কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। তারপর নাম না করলেও নিশানা করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমোও। তারপর গতকাল গর্জে ওঠেন খোদ শুভেন্দু অধিকারীও (Suvendu Adhikari)। তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রীকেও। প্রশ্ন তুলে বলেন, 'শিক্ষা দফতর জেলে, খাদ্য দফতর জেলে, স্বাস্থ্যও যাবে জেলে। মন্ত্রিসভায় নিয়োগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত হবে না কেন?'। আর তারপরই এবার শুভেন্দুর স্ক্যানারে আসেন রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি।


মূলত, রেশন বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারির পর থেকে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। দুর্নীতি, কালো টাকা সাদা করা এবং বেনামি সম্পত্তির অভিযোগে তৃণমূলকে লাগাতার আক্রমণ করছে বিরোধীরা। এই অবস্থায় দিন দু'য়েক আগে পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় হাঁটেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কখনও বেনামি বাড়ি, কখনও পেট্রোল পাম্প, কখনও ট্রলারের প্রসঙ্গ তুলে, নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


তিনি বলেছিলেন, 'কারও কারও ৬০, ৭০, ৮০টা নানা লোকে নানা বলে ট্রলার আছে। কত বেনামি বাড়ি আছে, কত পেট্রোল পাম্প আছে, কত কোটি কোটি টাকা আছে, তারা বড় বড় কথা বলে কী করে? আমরাও কাগজপত্র বের করছি, এতদিন করিনি। আমরা কি দেখতে গেছি হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটি যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন আগে, মন্ত্রী থাকাকালীন, কোনটা, কোন জমিটা কত টাকায় বিক্রি করেছেন ? দিঘা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বানিয়ে দিলাম ভাল কাজ করার জন্য, কত জমি দিয়েছে? ৬০০ হোটেল তৈরি হয়েছে। আমরা একবারও জানতে গেছি? জানিনি।'


আরও পড়ুন, শিশিরের 'সম্পত্তি বৃদ্ধি'র তদন্ত চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি কুণালের


পাল্টা জবাবে শুভেন্দু বলেছিলেন, 'আপনার ভাইপো আপনার পরিবারে ইনকাম ট্যাক্সে কিছু দেখানো নেই। পেট্রোল পাম্প কটা সব বৈধ। আপনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগের পেট্রোল পাম্প। ইনকাম ট্যাক্স দেখে নেবেন। '২১ সালে শুভেন্দু অধিকারীর হলফনামা দেখে নেবেন, আপনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইনকাম ট্যাক্স দেওয়া, আধিকারী পরিবার আপনার মতো ওই রকম কালীঘাটের নালার পাশে লোকের জায়গা জবরদখল করে বড়লোক হয়নি।'