আবির দত্ত, কলকাতা: পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধের মধ্য়েই, সিঁদুরে মেঘ দেখা দিচ্ছে, আমাদের রাজ্য়ের সীমান্তগুলো নিয়েও। যার মধ্য়ে রয়েছে উত্তরবঙ্গের চিকেন নেক। বাংলাদেশি জঙ্গিরা যা নিয়ে বারবার হুমকি দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করেছে বিএসএফ। প্রয়োজন পড়লেই যাতে ব্যবহার করা যায়, তৈরি রাখা হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র। আশপাশের গ্রামগুলিতে যাতে বাইরের কেউ সহজে ঢুকতে না পারে, বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। শিলিগুড়ির ফুলবাড়ি, পানিট্যাঙ্কি নেপাল সীমান্ত থেকে করোনেশন ব্রিজ, সব জায়গায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলছে বিএসএফ। বাইরের কেউ এলেই সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় খবর দিতে বলা হয়েছে। জোর দেওয়া হয়েছে ইন্টালিজেন্সেও।
আরও পড়ুন, পুঞ্চে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর রাত থেকে টানা গোলাবর্ষণ পাক সেনার !
প্রায় যুদ্ধের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ভারত-পাকিস্তান। গোলাগুলির শব্দে কাঁপছে সীমান্ত। 'অপারেশন সিঁদুর'-এর পর এখন যে কোনওভাবে ভারতের ক্ষতি করতে মরিয়া পাকিস্তান। এই প্রেক্ষিতে সীমান্তগুলোতে এখন নিরাপত্তার কড়াকড়ি। চূড়ান্ত সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি করিডর বা চিকেনস নেকেও। পূর্বে নেপাল, পশ্চিমে বাংলাদেশ। মাঝখানে খুব সঙ্কীর্ণ একটি অংশ ভারতের। দেখতে অনেকটা মুরগির ঘাড়ের মতো, তাই নাম 'চিকেনস নেক'। উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের সংযোগ স্থাপনের মাধ্য়ম এই পথ।ফলে কৌশলগতভাবে অত্য়ন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভারত-চিন-ভুটানের সীমান্ত ঘেঁষা এই সরু করিডরটি।চিকেনস নেকের ওপর সবসময়ই নজর থাকে চিনের। বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনের সঙ্গে আবার পাকিস্তানের সম্পর্কও যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ। ফলে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আবহে ভারতকে উত্য়ক্ত করতে এখানে নজরদারি বাড়াতে পারে চিন। সেকথা মাথায় রেখে এখন চিকেনস নেকের দিকে বাড়তি নজর রেখেছে ভারত।
প্রয়োজন পড়লেই যাতে ব্যবহার করা যায়, তাই তৈরি রাখা হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র। আশপাশের গ্রামগুলিতে যাতে বাইরের কেউ সহজে ঢুকতে না পারে, বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। গ্রামবাসীদের সঙ্গেও লাগাতার যোগাযোগ রেখে চলেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী। তৈরি রয়েছে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও। চোপড়ার বাসিন্দা মইদুল ইসলাম বলেন, গ্রামবাসীদের সঙ্গে বিএসএফ কথা বলছে। কোন গ্রামে কে আসছে খবর রাখছে।মানচিত্রে শিলিগুড়ি করিডর ২০-২২ কিলোমিটার হলেও আশেপাশের এলাকা মিলিয়ে প্রায় ৭৫ কিলোমিটারের মতো জায়গা। শিলিগুড়ির ফুলবাড়ি থেকে পানিট্যাঙ্কি নেপাল সীমান্ত, নজরদারিতে এতটুকু ফাঁক রাখছে না প্রশাসন।
বাংলাদেশি গাড়িচালক সিকন্দর বলেন, আগে জাল লাইসেন্স নিয়ে অনেকে আসত। এখন ৬ বার করে চেক হয়। কাশ্মীরের ঘটনার পর কড়াকড়ি।বাইরে থেকে আগে সীমান্তের গ্রামে কেউ যাতে না আসতে পারে তাই জনসংযোগ। কেউ যাতে চক্রান্ত করতে না পারে। ভৌগলিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেবকের করোনেশন ব্রিজ। এখান থেকে একদিকে কালিম্পং থেকে সিকিম হয়ে চিনে ঢোকার রাস্তা। আরেকদিকে জলপাইগুড়ি আলিপুরদুয়ার হয়ে ভুটান। পুলিশের কড়াকড়ি বেড়েছে। এক পুলিশ কর্মী বলেন, 'রাত করেও থাকছি এখন... আগে এত পাহারা ছিল না।' ভারত-নেপাল সীমান্ত পানিট্যাঙ্কিতে সাধারণত নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারেন। এখন নেপালের নাগরিক ছাড়া কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সামগ্রিকভাবেও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় এখন আঁটসাঁট নিরাপত্তা। সীমান্তে নিরাপত্তা নিয়ে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী-সহ বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব ও DGP-দের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।