আশাবুল হোসেন, দীপক ঘোষ, প্রদ্যোৎ সরকার, কৃষ্ণনগর: পুরভোটে দলে প্রার্থী অসন্তোষ কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। নদিয়া জেলার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে কড়া বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট বলে দিলেন, ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এক ব্যক্তি একই পদ আঁকড়ে চিরদিন থাকতে পারবেন না। কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রর নাম করে গোষ্ঠীকোন্দল রুখতে কড়া বার্তা দিলেন মমতা। 


মহুয়ার নাম করে মমতা বলেন, ‘মহুয়া, এখানে আমি একটা স্পষ্ট মেসেজ দিতে চাই। কে কার পক্ষে বিপক্ষে আমার দেখার দরকার নেই। আমি সাজিয়ে-গুছিয়ে কিছু লোক পাঠিয়ে ইউটিউব অথবা ডিজিটাল অথবা পেপারকে দিয়ে দিলাম। এই রাজনীতি একদিন চলতে পারে, চিরদিন নয়। আর একই লোক এক জায়গায় চিরদিন থাকবে, সেটা মেনে নেওয়াটা ঠিক নয়। যখন ইলেকশন হবে পার্টি ডিসাইড করবে কে দাঁড়াবে। সুতরাং সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এটা আমি বলে গেলাম।’


গত শনিবার দলের পুরভোট বৈঠকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দেন, যাঁরা টিকিট পাননি, তাঁরা যদি অশান্তি করেন বা দলকে হারানোর চেষ্টা করেন, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুরভোট জল্পনার আবহে এর পাঁচদিনের মাথায় কড়া বার্তা এল খোদ নেত্রীর তরফ থেকে।


বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরের রবীন্দ্র ভবনে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তাঁর নাম উল্লেখ করে গোষ্ঠীকোন্দল রুখতে কড়া বার্তা দেন মমতা। এরপরই জেলা তৃণমূল সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন তিনি। তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘এখানে জয়ন্ত কে আছে? আমি জানি ঘটনাটা কে করেছে। এটা অ্যাকচুয়াল ঘটনা নয়, সাজিয়ে গুছিয়ে করা হয়েছে। পুলিশ,সিআইডি তদন্ত করেছে। রিপোর্টে জেনেছি।’


নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল সভাপতি জয়ন্ত সাহা। স্থানীয় তৃণমূল সূত্রে খবর, সম্প্রতি জয়ন্ত সাহার বিরুদ্ধে আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ির বিনিময়ে গরিবদের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার অভিযোগ ওঠে। তার বিরোধিতা করে রাস্তায় পোস্টার হাতে বিক্ষোভ দেখান কয়েকজন। এবার বিধাসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে কৃষ্ণনগর বিধানসভা আসনে জয়ী হন মুকুল রায়। তখন নদিয়া জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন জয়ন্ত সাহা। স্থানীয় তৃণমূল সূত্রে খবর, বিজেপি-র কাছ থেকে টাকা নিয়ে দলে অন্তর্ঘাত করে মুকুল রায়কে জেতানোয় সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছিল জয়ন্ত সাহার বিরুদ্ধে।


দলনেত্রীর বক্তব্যের পর অবশ্য অনেকটাই আশ্বস্ত তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি। তিনি বলেছেন, ‘কিছু সময় রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র হয়ে থাকে। সত্যের যে জয় হয় তার প্রমাণ হল মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। তিনি যে সব খবর রাখেন, নজর রাখেন, তা প্রমাণ হল। যারা নিন্দুক, ষড়যন্ত্রকারী, তাদের বলি, ভাই এসব করে লাভ নেই। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করি।’


এদিকে, প্রশাসনিক বৈঠকে গোষ্ঠীকোন্দল ইস্যু উঠে আসায় কটাক্ষ করেছে বিজেপি। নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা বিজেপি আহ্বায়ক সন্দীপ মজুমদার বলেছেন, ‘প্রশাসনিক বৈঠকে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। এটা কি প্রশাসনিক বৈঠক, না কি প্রশাসনের টাকায় তৃণমূলের বৈঠক? প্রশাসনিক বৈঠকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি জয়ন্ত সাহা কী করে ডাক পায়? রাজনৈতিক নেতারা কেন প্রশাসনিক বৈঠকে থাকবেন? তিনি তো জনপ্রতিনিধি নন। এদিকে নদিয়ায় বিজেপির জনপ্রতিনিধিদের বৈঠকে ডাকা হয়নি।’