সুমন ঘড়াই, কলকাতা: হাঁসখালি (Hanskhali) থেকে শান্তিনিকেতন (Shantiniketan) বা কাকদ্বীপ (Kakdwip)। রাজ্যে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর (CM Mamata Banerjee) পদত্যাগ দাবি করলেন বিশিষ্টজনেদের একাংশ। পাশাপাশি, হাঁসখালির ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করা হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি: হাঁসখালি থেকে দেগঙ্গা, পিংলা থেকে ইংরেজবাজার, কখনও গণধর্ষণের অভিযোগ, কখনও বা ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। আর এই আবহে ফের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সামনে এল। একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনায় সোচ্চার হলেন বিশিষ্টজনদের একাংশ। আজ প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্তি বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় (Ashok Ganguly), কবি মন্দাক্রান্তা সেন (Mandakranta Sen), পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় (Kamaleshwar Mukherjee), কবি কাজি কামাল নাসের (Kazi Kamal Nasser), অভিনেতা দেবদূত ঘোষ (Debdut Ghosh) মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফার দাবি জানান। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়। পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূল।
উল্লেখ্য, হাঁসখালির ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু লাভ অ্যাফেয়ার্স ছিল কিনা, দেখতে হবে। শুনেছি দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।’ পাশাপাশি ঘটনায় রাজ্যের শাসক দল জড়িয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তোপ দেগে তৃণমূল সুপ্রিমোর সংযোজন, ‘তৃণমূলকে টানার কী দরকার? সবাই তো তৃণমূল। ছেলেটার বাবা তৃণমূল করে তো কি হয়েছে, রং না দেখে গ্রেফতার হয়েছে।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংযোজন, 'ঘটনাটা খারাপ, কিন্তু গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু প্রথমেই কেন থানায় রিপোর্ট করা হয়নি? না জানিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হল কেন? শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিশনকে মামলাটি দেখতে বলব, তদন্তের পরে কেসটা কি ছিল, সেটা আমরা জানাব।' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি।
এদিন প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্তি বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "কোন জঙ্গলে আমরা বাস করছি। তার উপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এধরনের উক্তি। এটা আমাদের দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলেছে। আমরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। এই আতঙ্কের রাজত্ব, জঙ্গলের রাজত্বের অবসান চাই। এই মুখ্যমন্ত্রীকে আমরা চাই না।'' সাংবাদিক সম্মেলনে পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় (Kamaleshwar Mukherjee) বলেন, " হতে পারে কিছুটা ভয় বা কিছুটা লোভের বসে অনেকে আলাদা হয়ে রয়েছেন। অনেক বিশিষ্টজন হয়ত মূক এবং বধির হয়ে রয়েছেন। কিন্তু ধৈর্য এবং সহ্যের একটা সীমা আছে। এই নৈরাজ্যের আগুনের আঁচ তাঁদের ধীরে ধীরে উত্তপ্ত করতে শুরু করলে তাঁরাও আসবেন। সেদিন খুব বেশি দেরি নেই।''
পাল্টা তোপ তৃণমূলের: এবিষয়ে পাল্টা তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, "ওঁরা সম্পূর্ণ বিকৃত এবং পক্ষপাতদুষ্ট কথা বলছেন। আমরা চাই না, মুখ্যমন্ত্রী চান না, প্রশাসন চান এরকম ঘটনা হোক। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাম আমলেও এধরনের ঘটনা ঘটেছে। বানতলার ঘটনার সময় জ্যোতি বসু বলেছিলেন, এরকম তো কতই হয়। নন্দীগ্রামে গণধর্ষণ হয়েছে। সিঙ্গুরে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। বাংলার অতীত ভয়ঙ্কর। এখানে সরকার, মুখ্যমন্ত্রী সংবেদনশীল। রাজনীতির রং না দেখে মুখ্যমন্ত্রী গ্রেফতার করতে বলেছেন। উন্নাও যা যোগী রাজ্যের মধ্যে পড়ে, সেখানে নির্যাতিতার আত্মীয়কে খুন করা হয়। পক্ষপাতদুষ্ট, বিকৃত প্রচার অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এর তীব্র নিন্দা করছি।''
আরও পড়ুন: Birbhum News: অদম্য ইচ্ছা শক্তির জের, অপারেশনের পর হাসপাতালেই পরীক্ষা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর