আবির দত্ত, কলকাতা: অনেকটা রাস্তা ধাওয়া করে পাকড়াও করা হয়েছিল দুই IS জঙ্গিকে। তাদের রাতভর জেরা করে মিলল চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। STF সূত্রে জানা গিয়েছে, ২ বছর ধরে জঙ্গি সংগঠন ISIS-এর সঙ্গে যোগ রয়েছে মহম্মদ সাদ্দাম ওরফে সাদ্দাম মল্লিকের। বেসরকারি সংস্থা থেকে চাকরি চলে যাওয়ার পর, সাদ্দাম বাড়িতে জানায়, তার ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম চলছে। সাদ্দামের মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপে মিলেছে IS জঙ্গিদের নৃশংস খুনের ভিডিয়ো। বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল সাদ্দামের। তৈরি করেছিল পাসপোর্ট। STF-এর দাবি, সুইসাইড স্কোয়াড সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধান করছিল সাদ্দাম। মিলেছে পাক-যোগও। পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত মহম্মদ সাদ্দাম। টেলিগ্রাম সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে সাঙ্কেতিক ভাষায় চলত কথাবার্তা। জেরায় সাদ্দাম জানিয়েছে, সে এম টেক ড্রপ আউট। সাদ্দাম ও তার সঙ্গীকে জেরা করে পুলিশ জানতে চাইছে, অস্ত্র ও বিস্ফোরক জোগাড় করে হামলার ছক ছিল কি না। ইসলামিক রাষ্ট্র তৈরির জন্যই কি নাশকতার পরিকল্পনা ছিল ধৃতদের? কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল এই দুই সন্দেহভাজন IS জঙ্গি? আপাতত এ সবের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।


STF সূত্রের খবর, সাদ্দাম পাসপোর্ট বানিয়েছিল। তার এক দাদা রয়েছে সৌদি আরবে। সেখানেও যাওয়ার কথা ছিল তার, জানা যাচ্ছে এমনটাই। কিন্তু সেখানে সাদ্দাম কেন যেত? কী পরিকল্পনা ছিল তার? শুধু কি সেখানেই যেত সে? নাকি অন্য কোনও ছক ছিল সাদ্দামের? খোঁজ চলছে সেই তথ্যের।


অস্ত্র কেন?
সাদ্দাম ও তার সঙ্গী অস্ত্র জোগাড় করছিল। কেন সেই কাজ করছিল, সেটাই খোঁজার চেষ্টা করছে STF। কোথাও কি হামলা করার ছক ছিল? সেরকম পরিকল্পনা থাকলে কীভাবে ওই হামলা করা হতো সবটাই জানার চেষ্টা হচ্ছে। একাধিক যুবককে দলে টানার চেষ্টা করেছে সাদ্দাম, কতজনকে এভাবে টানা হয়েছে, মগজধোলাই হয়েছে, তা খোঁজা হচ্ছে।   


অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল পৃথ্বীরঞ্জন দাস বলেন, 'এদের উপর নজরদারি রাখতে গিয়ে অনেকসময় নানা বিড়ম্বনায় পড়েছি। সেক্ষেত্রে এসটিএফ যে দুজনকে ধরল, তার জন্য এসটিএফকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে আমাদের ইনটেলিজেন্স নেটওয়ার্ক দুর্বল। রাজ্যের প্রশাসন ততটা গা লাগায় না। এক্ষেত্রে পুরো পেশাদারিত্ব নিয়ে সারা দেশে ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার যদি চালু হয়, তাহলে এদের মতো লোকজনকে দ্রুত ধরা যাবে।'

বিএসএফ এর প্রাক্তন আইজি সমীর মিত্র বলেন, 'কলকাতা জঙ্গিদের স্যাংচুয়ারি। এরা যার ধরা পড়ল, তারা হিমবাহের চূড়া। আমাদের যতটা সতর্ক হওয়া দরকার, আল কায়দা, আইসিস-এর প্রতি যতটা সতর্ক থাকা দরকার, ততটা আমরা নই। পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ, অস্ত্র জোগাড়, আত্মঘাতী আক্রমণের ছক ছিল। যে সাঙ্কেতিক ভাষায় যোগাযোগ করা হচ্ছিল, সেটা ডি-কোড করা দরকার। এটাও দেখতে হবে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে কিনা।'


শুরু রাজনৈতিক তরজা:
জঙ্গি সন্দেহে ২ জন গ্রেফতারের পরে শাসক দলকেই নিশানা করেছে বিরোধীরা। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'বাংলা জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয়। বিনাযুদ্ধে ভারত দখলের চক্রান্ত চলেছে। অনুপ্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গি আনা, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা আনা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে।'
যদিও বিরোধীদের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। দলের তরফে দাবি, জঙ্গি ধরা পড়েছে এটাই কৃতিত্বের। 


আরও পড়ুন:  কলকাতায় আটকে বাংলাদেশগামী একাধিক বিমান! বিঘ্নিত উড়ান পরিষেবা