কলকাতা: পোস্ট অফিসের গ্রাহকদের সঙ্গে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ। যাদবপুর পোস্ট অফিসে প্রায় ৭০ জন গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ সামনে এস। যাদবপুর থানায় সেই মর্মে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে পোস্ট অফিসের অভিযুক্ত এজেন্টকে। ভুয়ো পাসবই বানিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতারণার অভিযোগ উঠছে। (Jadavpur Post Office Cheating Case)
যাদবপুরের রিজেন্ট এস্টেট পোস্ট অফিসের প্রায় ৭০ জন গ্রাহক জানিয়েছেন, তাঁরা সর্বস্বান্ত হয়েছেন। তাঁদের দাবি, এজেন্টকে বিশ্বাস করতেন তাঁরা। টাকা জমা দেওয়া, তোলা, সব কাজই করতেন অভিযুক্ত এজেন্ট। কিন্তু সম্প্রতি কয়েক জন পোস্ট অফিসে গিয়ে পাসবুক দেখালে বোঝা যায়, সেগুলি ভুয়ো। (Kolkata News)
রিজেন্ট ওই এস্টেটের ওই পোস্ট অফিসে অ্যাকাউন্ট ছিল সকলেরই। কারও ৩.৫ কোটি টাকা, কারও ৭৫ লক্ষ টাকা খোয়া গিয়েছে। সবমিলিয়ে কোটি কোটি টাকার প্রতারণার ঘটনা সামনে এসেছে। যাদবপুর থানায় এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সিদ্ধার্থ করঞ্জাই নামের অভিযুক্ত এজেন্টকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
এখনও পর্যন্ত যে খবর মিলছে, তা হল, গ্রাহকদের টাকা সিদ্ধার্থ তুলে নিয়েছিলেন। টাকা তোলার জন্য চেক দিলেও, নিজে সেই টাকা নিয়ে নিতেন তিনি। বিষয়টি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এদিন পোস্ট অফিসের বাইরে জড়ো হন গ্রাহকরা। যদিও পোস্ট অফিসের বর্তমান পোস্ট মাস্টার জানিয়েছেন, অতি সম্প্রতিই কাজে যোগ দিয়েছেন। গোটা বিষয়টি তিনিও জেনেছেন সম্প্রতিই। পাসবুকগুলি দেখে তিনিই জানান যে সেগুলি ভুয়ো।
প্রতারিত অভিজিৎ মজুমদার বলেন, "দীর্ঘ দিন ধরে মা-বাবা, স্ত্রী এবং নিজের টাকা পোস্ট অফিসে রেখেছিলাম। লোকেশ করঞ্জাই নামের এক এজেন্ট সব কাজ করতেন দীর্ঘ অনেক বছর। উনি মারা যাওয়ার পর, ওঁর ছেলে সেই কাজের দায়িত্ব নেয়। বাড়িতে গিয়ে পোস্ট অফিসের এজেন্ট বলে পরিচয় দেয় ও। বিশ্বাস করে ওকে সেভিংসের সমস্ত বই, রিইনভেস্ট করতে দিই ওকে। ভেরিফাই করতে এসে দেখি, সব পাসবই নকল। প্রায় ৩.৫ কোটি টাকার মতো। ও স্বীকার করেছে, পোস্ট মাস্টারের সাহায্য়ে আমাদের টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নিয়েছে। এর জন্য় টাকাও দিয়েছে পোস্ট মাস্টারকে।"
আর এক প্রতারিত, পার্থ পাল বলেন, "এখানের আগের পোস্ট মাস্টার দিলীপ জানা বাড়িতে গিয়েছিলেন। মা জানান, টাকা আছে চিন্তা নেই। দিয়ে যাবেন। এর পর যখন গেলাম এজেন্টের কাছে, স্বীকার করল টাকা তুলে ফেলেছে। জানতে চাইলাম, এজেন্ট হয়ে আমার মায়ের টাকা কী করে তুললে? ধরলাম যখন, জানতে পারলাম, বিজয়গড়ের কোন প্রেস থেকে বানাত। মায়ের ১০ লক্ষ টাকা ছিল।"
এতদিন ধরে কোটি কোটি টাকা সরালেন এজেন্ট, অথচ জানতে পারলেন না গ্রাহকরা? প্রতারিতরা জানিয়েছেন, কিছু বুঝতে পারেননি। এজেন্টই পাসবুক আপডেট করিয়ে আনতেন, যাতে পোস্ট অফিসের স্ট্য়াম্পও থাকত। পোস্ট অফিসের ভিতরের কেউ এর সঙ্গে যুক্ত কি না, তাও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। বিশেষ করে পোস্ট অফিসের স্ট্যাম্প ব্যবহার, গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরানোর বিষয়টি কেন কর্তৃপক্ষের নজরে এল না, উঠছে প্রশ্ন। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।